ধৈর্য্যশীল ও পরিশ্রমী জীবনে জয়ি হতে পারে।

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় পঞ্চাশ জন দৌড়বিদ অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সেটি ছিল ত্রিশ মাইলের এক ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা। দৌড়বিদদের মধ্যে দশজনের বয়স ছিল চল্লিশ বছরের অধিক। পনেরজনের বয়স ছিল ত্রিশ বছরের কোটায়। আর বাকী পঁচিশজন ছিল সদ্য যৌবনে পা দেওয়া টগবগে তরুণ, যাদের বয়স ছিল ১৮-২২ বছরের মধ্যে।

দৌড় প্রতিযোগিতা যখন শুরু হলো তার ১০-১২ মিনিট পর দেখা গেলো – অল্প বয়সী দৌড়বিদরা ইতোমধ্যেই তিন-চার মাইল পথ অতিক্রম করে ফেলেছে। ত্রিশ বছরের দৌড়বিদরাও অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু, চল্লিশ বছরের অধিক বয়সের দৌড়বিদরা তখনো এক মাইল পথও অতিক্রম করতে পারেননি। অনেক দর্শক টিভির পর্দায় এই দৌড় প্রতিযোগিতা দেখছিলেন। অনেক দর্শক তাদের নিজ নিজ পর্যবেক্ষণ শক্তি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতে শুরু করলেন।

অনেকে বললেন – এই বুড়ো লোক গুলোর এখানে নামাই উচিত হয়নি। অনেকে একটু আগ বাড়িয়ে বললেন ছাগল দিয়ে কি আর হাল-চাষ হয় ? যখন ম্যারাথন দৌড় শেষ হলো – তখন বিরুপ মন্তব্য করা দর্শকরা ভীষণ অবাক হলো, কারণ, প্রতিযোগিতায় যে দুজন প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন, তাদের দুজনের বয়স চল্লিশের অধিক। ম্যারাথন দৌড় একটা দীর্ঘ প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় ধৈর্য্য-বুদ্ধি-শক্তি সব কিছুরই দরকার হয়। প্রতিযোগিতায় যে অল্প বয়সী – তরুণরা অংশ নিয়েছিল – তাদের প্রচন্ড শারীরিক শক্তি ছিল। কিন্তু তারা ছিল বেশ অনভিজ্ঞ।

সে জন্যই তারা প্রথমে খুব জোরে দৌড়ে প্রথম ঘন্টাতেই পনের-ষোল মাইল পথ অতিক্রম করেছিল। এর পর তাদের শক্তি ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা দৌড়াতে পারেনি। অপর পক্ষে, যারা অভিজ্ঞ ছিলেন তারা প্রথমে খুব আস্তে দৌড়েছিলেন। তাদের লক্ষ্য ছিল, গন্তব্যে পৌছানোর আগে কোনভাবেই যেন শক্তি ফুরিয়ে না যায়। আমাদের জীবনও একটা ম্যারাথন দৌড় প্রতিযোগিতা। বলা যায়, ম্যারাথনের ম্যারাথন। এই ম্যারাথনে বিজয়ী – হতে দরকার ধৈর্য্য – বুদ্ধি – অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করা।

অল্প বয়সী তরুণরা অনেক ভুল করে। অনেক সময় তারা যে ভুলটি করছে, সেই ভুলকেও তাদের শতভাগ সঠিক বলে মনে হয়। এটা অবশ্য তাদের দোষ নয়, বয়সের দোষ ! বয়স বাড়ার সাথে সাথে পূর্বের ভুল গুলো তাদের চোখে ভেসে ওঠে এবং তারা অনুতপ্ত হয়। জীবনের ম্যারাথনে জয়ী হতে ধৈর্য্যশীল ও পরিশ্রমী হতে হবে – এটা সত্য। এর চেয়েও বড় সত্য হলো, সব কিছুর আগে নিজের চরিত্রকে ঠিক রাখতে হবে।

চরিত্রবান মানুষদের জীবনের রেলগাড়ি কখনো লাইনচুত হয় না। হয়তো তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে একটু দেরি হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট গন্তব্যে তারা একদিন না একদিন পৌছাবেই।

Add Comment