মাইক্রোসফট অফিস এর ফ্রি বিকল্পগুলো সম্পর্কে জানুন

মাইক্রোসফট অফিস এর মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট, ইত্যাদি সফটওয়্যার বেশ জনপ্রিয়। অনেকেই জানেন যে মাইক্রোসফট অফিসের এই সচরাচর অফলাইন প্রোগ্রামগুলো কিন্তু আসলে ফ্রি সফটওয়্যার নয়। এগুলো টাকা দিয়ে কিনতে হয়।

আমাদের দেশের অনেক মানুষ এই সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই ক্র‍্যাক করা হয়ে থাকে। ক্র্যাকড অর্থাৎ তারা না কিনেই লাইসেন্স প্রক্রিয়া অমান্য করে অবৈধভাবে সেগুলো ব্যবহার করে থাকেন। ক্র্যাক করে পেইড সফটওয়্যার ব্যবহার করা বেআইনি এবং অন্যায়।

মাইক্রোসফট অফিস এর মত একই কাজ করার জন্য একই ধরনের অসংখ্য ফ্রি সফটওয়্যার রয়েছে। আমাদের উচিত মাইক্রোসফট অফিস ক্র‍্যাক না করে বরং এর ফ্রি বিকল্প ব্যবহার করা। এই পোস্টে জানবেন মাইক্রোসফট অফিস এর সেরা বিকল্পসমূহ সম্পর্কে যা বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে।

গুগল ডকস

গুগল ডকস কি Google Docs ব্যবহারের নিয়ম ও সুবিধা জানুন

একটি গুগল একাউন্ট থাকলে যেকেউ গুগল ডকস ব্যবহার করতে পারে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। গুগল একাউন্টের মাধ্যমে গুগলের বিভিন্ন সেবা ব্যবহার করা যাবে।

যেমনঃ ইমেইল এর জন্য জিমেইল, ক্লাউড স্টোরেজের জন্য গুগল ড্রাইভ, ওয়ার্ড প্রসেসিং এর জন্য গুগল ডকস, স্প্রেডশিটস এর জন্য গুগল শিটস, প্রেজেন্টেশনের জন্য স্লাইডস ও ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য গুগল মিট।

গুগলের এই সেবাগুলোর ভালো বিষয় হলো এই সার্ভিসসমূহ ব্যবহার করতে কোনো ধরনের সফটওয়্যার ডাউনলোড করার প্রয়োজন নেই। মডার্ন যেকোনো ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করে যেকেউ উল্লেখিত টুলসমূহ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারে।

আবার অ্যান্ড্রয়েড ও অ্যাপল ডিভাইসের জন্য রয়েছে ডেডিকেটেড মোবাইল অ্যাপ, যা এই সার্ভিসকে আরো সহজলভ্য করেছে।

অনলাইন টুলস হওয়ার কারণে গুগল এর এই প্রোগ্রামগুলো ব্যবহার করে কোলাবোরেশান করা যায় বেশ সহজে। এছাড়া মাইক্রোসফট-ফরম্যাট ডকুমেন্ট ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট করা যায় গুগল ডকস এ।

এক্সেল এর কাজ করতে চাইলে আছে গুগল শিটস, আর পাওয়ারপয়েন্ট এর মত সুন্দর দেখতে প্রেজেন্টেশন বানাতে চাইলে ব্যবহার করতে পারবেন গুগল স্লাইডস। ভিজিট করে ব্রাউজারেই টুলগুলো ব্যবহার করতে পারেন।

লিব্রাঅফিস বা লিবারঅফিস

লিব্রাঅফিস বা লিবারঅফিস

মাইক্রোসফট অফিস এর যতগুলো ফ্রি ডেস্কটপ অল্টারনেটিভ আছে, তার মধ্যে লিব্রাঅফিস (libreoffice.org) বা লিবারঅফিস সবচেয়ে জনপ্রিয়। এটি ফ্রি হওয়ার পাশাপাশি একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। অনেক বছর ধরেই উইন্ডোজ, ম্যাক ও লিনাক্স প্ল্যাটফর্মে লিব্রাঅফিস ব্যবহার হয়ে আসছে মাইক্রোসফট অফিস এর বিকল্প হিসেবে।

২০১৮সালের জানুয়ারি মাসে লিব্রাঅফিস বহুল প্রতিক্ষিত ভার্সন ৬.০ লঞ্চ করেছে যাতে অনেক নতুন ফিচার, বাগ ফিক্স, পারফরম্যান্স ইম্প্রুভমেন্ট, নতুন সহজ ন্যাভিগেশনযুক্ত হেল্প সিস্টেম যুক্ত করা হয়। মাইক্রোসফট অফিস এর সকল ধরনের ফাইল ফরম্যাট সাপোর্ট করে লিব্রাঅফিস।

এখানে জানিয়ে রাখছি, মাইক্রোসফট অফিসের একটি অনলাইন ভার্সন রয়েছে যা বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। অবশ্য সেখানে প্রিমিয়াম ফিচারও রয়েছে।

তাই আপনি যদি শুধুমাত্র ব্রাউজারে অফিস অ্যাপস ব্যবহার করতে চান তাহলে office.com ভিজিট করে মাইক্রোসফট অফিস ফ্রিতে এবং বৈধভাবেই ব্যবহার করতে পারবেন।

অনলিঅফিস

অনলিঅফিস

অনলিঅফিস সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ না জানলেও এটি অন্য কোনো অফিস স্যুট থেকে কোনোদিক দিয়ে কম নয়। এর স্লোগান  “Powerful like Microsoft Office, free like LibreOffice” থেকে ধারণা করা যায় নিজেদের প্রোডাক্ট নিয়ে কতটুকু কনফিডেন্ট অনলিঅফিস এর ডেভলপারগণ।

অনলিঅফিস এর সেরা বিষয় হলো এটি মাইক্রোসফট অফিস এর সকল ফাইল ফরম্যাট সাপোর্ট করে যা অধিকাংশ অফিস স্যুটে থাকেনা। অনলিঅফিস এর ইন্টারফেস বেশ ক্লিন ও প্রফেশনাল, যা মাইক্রোসফট অফিস এর ইন্টারফেস যারা পছন্দ করেননা তাদের ভালো লাগবে।

👉 মোবাইলে চলছে উইন্ডোজ ১১ – কীভাবে সম্ভব?

অর্থাৎ অন্যসব অফিস স্যুটের কমতিগুলো পূরণ করছে অনলিঅফিস, যার জন্য এটি মাইক্রোসফট অফিস এর একটি অসাধারণ অল্টারনেটিভ।

অনলিঅফিস এর শুধুমাত্র ক্লাউড ভার্সন রয়েছে। অর্থাৎ এটি শুধুমাত্র অনলাইনে ব্যবহার করা যাবে যেকোনো মডার্ন ব্রাউজারে। এছাড়াও নিজের সার্ভারে অনলিঅফিস হোস্ট করা যায় ও প্রাইভেট অ্যাকসেস এর জন্য অন্যদের সাথে শেয়ার করা যায়।

ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাওয়া যাবে অনলিঅফিস। সাধারণ ও প্রফেশনাল ইন্টারফেস এর পাশাপাশি কোনো ধরনের ডিসট্রাকশন থাকছেনা। onlyoffice.com অ্যাপ হওয়ার ফলে রিয়েল-টাইম কোলাবোরেটিভ এডিটিং ও শেয়ারিং সম্ভব। কোম্পানির ব্যবহারের জন্য বার্ষিক ১২০ডলার চার্জ দিতে হবে।

WPS অফিস

WPS অফিস 

WPS Office একটি অসাধারণ অফিস স্যুট, যা বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে। একটি অফিস স্যুটে যা থাকা প্রয়োজন, প্রত্যেকটি ফিচার রয়েছে এই অ্যাপে। এছাড়াও এই অ্যাপে পিডিএফ কনভার্শন, পিডিএফ মার্জিং ও স্পিল্টিং, ডকুমেন্ট সিগনেচার, ডকুমেন্ট এনক্রিপশন, ফন্টস ও টেম্পলেট, ইত্যাদি অনেক ইউনিক ফিচার রয়েছে।

WPS অফিস এর ফ্রি ভার্সন এর সমস্যা হলো এতে এড দেখানো হয়। আর কিছু দরকারি ফিচার যার কারণে স্পন্সরড এড দেখে ফিচার ৩০মিনিটের জন্য আনলক করতে হয়। তবে ব্যানার এড থেকে এই ফিচারভিত্তিক এড অনেক সুবিধার।

বলে রাখা ভালো অপেক্ষাকৃত দূর্বল হার্ডওয়্যারে WPS অফিস ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে। তাই আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ যদি পুরোনো হার্ডওয়্যারে তৈরী হয়, তবে তালিকার অন্য কোনো বিকল্প দেখাই ভালো। আবার WPS অফিস (wps.com) এর প্রিমিয়াম ভার্সন বার্ষিক মাত্র ৩০ডলারের বিনিময়ে কেনা যাবে।

👉 মাইক্রোসফট অফিস শিখুন শুরু থেকে শেষ

ওপেনঅফিস

OpenOffice ওপেনঅফিস

ওপেনঅফিস প্যাকেজে রয়েছে একটি ওয়ার্ড প্রসেসর, ডাটাবেজ, স্প্রেডশিট ও প্রেজেন্টেশন প্রোগ্রাম যা বলতে গেলে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপসমূহের বিকল্প। ওয়ার্ড প্রসেসিং এর জন্য রাইটার, স্প্রেডশিট এর জন্য ক্যালক, ডাটাবেজ এর জন্য বেস ও প্রেজেন্টেশনের জন্য ইমপ্রেস রয়েছে। ওপেনঅফিস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও এই অফিস স্যুটে ড্র ও ম্যাথ অ্যাপ রয়েছে।

অনেক ধরনের জনপ্রিয় ফাইল ফরম্যাট সাপোর্ট করে ওপেনঅফিস। ইন্সটল করার সময় শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো ইন্সটলের সুযোগ রয়েছে ওপেনঅফিসে। উইন্ডোজ, ম্যাক ও লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে ওপেনঅফিস ব্যবহার করা যায়। রয়েছে পোর্টেবল ভার্সন যা ব্যবহার করে ইন্সটল করা ছাড়া ওপেনঅফিস (openoffice.org) ব্যবহার করা যায়।

ফ্রিঅফিস

FreeOffice ফ্রিঅফিস

মাইক্রোসফট অফিস এর দারুণ একটি অল্টারনেটিভ হলো ফ্রিঅফিস। ফ্রিঅফিস ব্যবহার করা যাবে উইন্ডোজ, লিনাক্স, এমনকি অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেও। মাইক্রোসফট এক্সেল, ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট এর প্রায় সকল ধরনের ফরম্যাট সাপোর্ট করে ফ্রিঅফিস।

ফিচারের দিক দিয়ে তালিকার অন্য অ্যাপের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে ফ্রিঅফিস। তবে আপনি যদি সাধারণ ফিচার ও প্রয়োজনীয় সকল টুল হাতের কাছে পেয়ে খুশি থাকেন, তবে ফ্রিঅফিস (freeoffice.com) আপনাকে হতাশ করবেনা।

এই পোস্টে উল্লিখিত মাইক্রোসফট অফিস এর ফ্রি বিকল্পসমূহ থেকে আপনার পছন্দের কোনটি? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

Add Comment