একজন বাবা ও তার ছেলে – সময়ের মূল্য নিয়ে একটি শিক্ষনীয় গল্প

একজন বাবা ও তার ছেলে

একটি গ্রামে একজন পিতা ও তার ছেলে থাকতো। লোকটি ছিল একজন ব্যবসায়ী। তাই তার কাছে সময়ের মূল্য ছিল অনেক।

কিন্তু তার ছেলে সময়ের মূল্য কি সেটা সে একদমই বুঝতো না। সর্বদা ফালতু সব বিষয়ে সে তার সময় নষ্ট করত।

কিন্তু সময়ের মূল্য কতটা সেটা ছেলেকে বোঝাতেই হবে। তাই তিনি যতটা সম্ভব ছেলেকে নানা রকম জিনিস বোঝাতে থাকেন।

কিন্তু ছেলে কোন কিছুই বুঝতে চায় না। তাকে বোঝাতে হলে একটি বাস্তব উদাহরণ তার চোখের সামনে তুলে ধরতে হবে।

তবে যদি সে সময়ের গুরুত্ব কি সেটা বুঝতে পারে। এরকম কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নেন। একদিন সেই ব্যক্তি তার ছেলেকে সাথে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে একটি পার্কে যায়।

সেই পার্কের বাইরে বসে অনেকেই সেখানে ভিক্ষা করছিল। তারপর ওই ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে সেখান থেকে তিনজনকে ডাকে এবং তাদের প্রত্যেককেই এক বান্ডিল করে টাকা দেন।

আমি চাইলে এক টাকাও দিতে চায় না কিন্তু এখন দেখো কত টাকা দান করছে। ছেলে মনে মনে এরকম ভাবতে থাকে। পিতা ছেলের মুখ দেখেই বোঝা যায় যে সে মনে মনে কি ভাবছে।

তখন তিনি ছেলেকে কোন কিছুই বলেন না। তারপর তারা দুজনে পার্কে ঘুরে ফিরে নিজেদের বাড়িতে ফিরে  যায়। দিন কাটতে থাকে এভাবে সময় যেতে যেতে এক বছর সম্পূর্ণ হয়ে যায়।

আর তখন ওই ব্যক্তি তার ছেলেকে নিয়ে আবার সেই পার্কে ঘুরতে যায়। আগের বছর তিনি এখানে তিনজন ভিখারিকে অনেকগুলো টাকা দিয়েছিল।

তাই না তিনি দেখতে পান যে তাদের মধ্যে একজন ভিখারি সেই একই জায়গায় বসে আজও ভিক্ষা করে যাচ্ছে।

তারপর ওই ব্যক্তি সেই ভিখারীর কাছে গিয়ে বলে যে তুমি আমাকে চিনতে পারছো  আগের বছর তো তোমাকে আমি অনেক টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনো তুমি এখানে ভিক্ষা করে যাচ্ছ।

সেই টাকাগুলো দিয়ে তুমি কি করেছো? এই ভিখারি তখন বলে যে, সত্যিই আপনি অনেকগুলো টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে আমি কি করব বুঝতে পারিনি।

তাই টাকা পেয়ে তার পরের দু-মাস আমি ভিক্ষা  করিনি। সেই টাকা দিয়ে আমি তখন ভালোমন্দ খেয়েছি আর আরাম সে থেকেছি।

কিন্তু দুমাস পরে ধীরে ধীরে সমস্ত টাকা ফুরিয়ে যায়। তাই আবার এই জায়গায় এসে ভিক্ষা করতে শুরু করি।

তখন এই ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করে যে তোমার পাশে তো আরো দুজন ছিল। যাদেরকে আমি টাকা দিয়েছিলাম তারা কোথায়?  তাদেরকে দেখতে পাচ্ছিনা?

ভিখারি তখন বলে যে ওদের মধ্যে একজনের কি হয়েছে সেটা আমি জানিনা। কিন্তু আরেকজন সে এখন আর ভিখারি নেই। সামনে একটা আইসক্রিমের দোকান দেখতে পাচ্ছেন।

ওই দোকানের মালিক সে এখন। এই কথা শুনে ওই ব্যক্তি ছেলেকে নিয়ে সোজা সেই আইসক্রিমের দোকানে যান।

গিয়ে দেখেন যে সত্যিই সেদিনের সেই ভিখারি আজ দোকানের মালিক। দোকানদার এই ব্যক্তিকে দেখা মাত্রই তার কাছে এসে হাত জোড় করে তাকে ধন্যবাদ জানায়।

তাকে দেখে তিনি বেশ খুশি হন। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে তোমার সাথে আরও দু’জনকে আমি টাকা দিয়েছিলাম তাদের মধ্যে লম্বা মত একজন ছিল সে এখন কোথায়?

দোকানদার বলে যে এখান থেকে সোজা কিছুটা গেলে একটা তাস খেলার ঘর আছে। আপনি যে টাকাগুলো দিয়েছিলেন সেই টাকা পাওয়ার পর ওখানে জুয়া খেলতে চলে যায়। আর ধীরে ধীরে আপনার দেওয়া সমস্ত টাকা সেই হেরে যায়।

এবং তার জোয়ার নেশা লেগে যায় আর তারপর থেকে ওর সারাদিন ভিক্ষা করে আর সন্ধ্যেবেলা সেই টাকা নিয়ে গিয়ে ওখানে জুয়া খেলে।

আপনি যে টাকা দিয়েছিলেন সেটা না দিলেই হয়তো ভালো হতো। এরকম অনেকবার আমার মনে হয়েছে এরপর সেই ব্যক্তি তার ছেলেকে কাছে ডেকে তার কাঁধে হাত রেখে বলেন – আমি এই তিনজনকে একই দিনে একই পরিমাণ টাকা দিয়েছিলাম

তার মধ্যে একজন সেটা কি করবে ভেবে না পেয়ে তার ভুল ব্যবহার করে আগের বছর তাকে যে জায়গায় দেখে গিয়েছিলাম এখনো সেই একই জায়গায় বসে আছে।

আর একজন সেই টাকা পেয়ে তার অপব্যবহার করে জুয়াড়ি হয়ে গিয়েছে আর আগের বছর শেষে জায়গায় ছিল এখন তার থেকেও খারাপ জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে।

মাত্র একজন সেই টাকার সঠিক ব্যবহার করে সবাইকে দেখিয়ে দেওয়ার মত একটি কাজ করেছে। আর তার কারণ হলো আমি যে টাকাটা কে দিয়েছিলাম সেই টাকাটা সে শুধু টাকা হিসেবে দেখে নি। সেটা একটি সুযোগ হিসেবে নিয়েছিল।

সে আর সে ওই সুযোগটির সঠিক ব্যবহার করেছিল তাই আজ তার জীবন বদলে গিয়েছে। টাকা পয়সাকে একদিকে রাখো। আমরা প্রতিদিন যে সময় পাই সেই সময়ের মূল্য এইটাকার থেকে অনেক বেশি।

আমরা মনে করলে আমাদের সমস্ত সময় আমরা ফালতু নষ্ট করে দিতে পারি। কিন্তু সেই সময়ের সঠিক ব্যবহার করলে এখন এর থেকে ভালো জীবন গড়ে তুলতে পারি। তুমি আমার ছেলে এখন এই দুটি পথ এর কোন পথে তুমি চলতে চাও সেটা তুমি নিজেই বিচার করে দেখো।

সেদিনের সেই ব্যক্তি তার ছেলেকে যে প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করেছিল আজ আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি যে ভাবে ওই ভিখারীগুলো টাকা পেয়েছিল সেই একইভাবে আমরা প্রত্যেকেই প্রতি বছর শুরু হওয়াতে 365 দিন আমরা সবাই পেয়ে থাকি।

এখন সেই দিনগুলো আমরা কিভাবে খরচ করব। সেই প্রথম বেকারির মত ফালতু খরচ করে আজকে যে পরিস্থিতিতে আছে সামনের বছর সেই একই পরিস্থিতিতে থাকব। নাকি ওই তৃতীয় ব্যক্তির ভুল ব্যবহার করি সামনের বছর এর থেকেও খারাপ পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাব।

নাকি সফলতা অর্জন করা ওই তৃতীয় ব্যক্তির মতো আমরা আমাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করি সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সময়কে আরো ভালো সময় পরিবর্তন করে দেব। বিচার তোমাকেই করতে হবে সিদ্ধান্ত তোমাকে নিতে হবে।

পাঠক বন্ধুরা গল্পটি কেমন লেগেছে কমেন্ট করে জানাবেন।

One Response

  1. Arifatul Jannat October 3, 2022

Add Comment

Skip to toolbar