কাজের প্রয়োজনে তো বটেই, নিছক বেড়াতেও মানুষ যাচ্ছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। তাই প্রতিনিয়তই বাড়ছে বিদেশি ভাষা জানা লোকের চাহিদা। আপনার যদি বিদেশি ভাষা জানা থাকে তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে একটি সম্ভাবনাময় চাকুরী।
ট্র্যাভেল এজেন্সি বা ট্যুরিজম কম্পানি, অনুবাদক সংস্থা, রিসোর্ট, মোটেল, পাঁচতারা হোটেল, বিমান ও পরিবহন কম্পানিতে রয়েছে বিদেশি ভাষা জানা মানুষের প্রচুর চাহিদা।
অনুবাদক হিসেবে ক্যারিয়ার
বিদেশি মিশন, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন প্রকল্পে অভিজ্ঞ দোভাষীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে চাকুরির আবেদনের ক্ষেত্রে সে দেশের ভাষা জানা প্রার্থীদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
আপনি যদি কোন ভাষায় দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন অনুবাদক সংস্থা ও বিদেশি দূতাবাসে অনুবাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। দেশি-বিদেশি দূতাবাস, গণমাধ্যম, এনজিও ও অনুবাদকেন্দ্রে প্রচুর চাহিদা অনুবাদকের।
দোভাষী হিসেবে ক্যারিয়ার
বিদেশি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পর দোভাষী হিসেবে গড়তে পারেন আপনার ক্যারিয়ার । এ ক্ষেত্রে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ, হিন্দি, জার্মান প্রভৃতি ভাষার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
দোভাষী হিসেবে কাজ শুরু করলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ ও উচ্চ বেতনের চাকরি পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান স্টাডিজ সেন্টারের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও খণ্ডকালীন শিক্ষক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘কোনো দেশের ভাষা শিখলে সে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। একই সঙ্গে চাকরির বাজারে নিজের গুরুত্ব বাড়ে।’
ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে ক্যারিয়ার
পেশা হিসেবে ট্যুরিস্ট গাইড একটি রোমাঞ্চকর পেশা। আসাদ উদ দৌলা আশিক, (কক্সবাজার ট্যুরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক) জানান, দেশে ট্যুরিজম কম্পানির সংখ্যা অনেক। এসব কম্পানিতে রয়েছে ট্যুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার
বিদেশি ভাষায় দক্ষ হলে অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে পারেন। বিভিন্ন ভাষায় প্রচুর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে। এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ করে আপনি ঘরে বসেই ভাল একটা টাকা উপার্জন করতে পারেন, যা কিনা অন্য সাধারণ চাকুরীর বেতন থেকেও বেশি।
কোথায় পাবেন ভাষা শেখার প্রতিষ্ঠান?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে আছে বিদেশি ভাষা শেখার সুযোগ। ইংরেজি, চীনা, আরবি, ফার্সি, জার্মান, কোরিয়ান, জাপানি, তুর্কি, স্প্যানিশ, ফরাসি, রাশিয়ান ও ইতালিয়ান ভাষার কোর্স চালু আছে।
এই কোর্স গুলো সবার জন্য উন্মুক্ত, তবে আপনাকে কমপক্ষে এইচএসসি পাস হতে হবে। শুধুমাত্র ইংরেজি কোর্স এর ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে আপনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হতে হবে।
এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিল, ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টার (BARC) এ ইংরেজি, গ্যেটে ইনস্টিটিউটে জার্মান, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে ফরাসি এবং রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে রাশিয়ান ভাষা শেখানো হয়।
তাছাড়া অনলাইনে IELTS কোর্স করার জন্য ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টার (BARC) নিয়ে এসেছে নতুন অনলাইন প্লাটফর্ম IELTS.live
কোর্সের মেয়াদ কতদিন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ কোর্সের মেয়াদ বার মাস। কিছু স্বল্পমেয়াদি কোর্সও রয়েছে। রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে তিন থেকে নয় মাসের কোর্স চালু রয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিলে চারটি ও ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টার (BARC) এ ইংরেজি শেখার নয়টি কোর্স চালু রয়েছে।
কেমন খরচ লাগবে?
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ভাষা শেখার কোর্স ফি তিন হাজার (৩০০০/-) থেকে চার হাজার (৪০০০/-) টাকা।
- আলিয়ঁস ফ্রঁসেসে তিন মাস মেয়াদি কোর্সের জন্য সেমিস্টার প্রতি খরচ হবে পাঁচ হাজার (৫০০০/-) থেকে বার হাজার (১২০০০/-) টাকা।
- রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে সেমিস্টার প্রতি খরচ হবে দুই হাজার পাঁচশ (২৫০০/-) থেকে তিন হাজার (৩০০০/-) টাকা।
- ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে কোর্স বাবদ খরচ হবে ষোল হাজার (১৬০০০/-) টাকা।
- ব্রিটিশ আমেরিকান রিসোর্স সেন্টার (BARC) এ বিভিন্ন মেয়াদের কোর্স চালু রয়েছে। কোর্স ফি পাঁচ হাজার চারশত টাকা (৫৪০০/-) থেকে শুরু করে ছাব্বিশ হাজার টাকা (২৬০০০/-) পর্যন্ত।