বর্তমানে এমন এক যুগে আমরা বাস করি যেখানে হাতের স্মার্টফোনটি দিয়ে কথা বলা ছাড়াও অনেক কাজই হয়। একটা সময় ছিল যখন একবার চার্জ দিয়ে মোবাইলটিকে আর বাকি এক/আধ সপ্তাহ চার্জারে না লাগালেও চলতো। কিন্তু এখন ডেস্কটপ (আংশিক), টিভি, রেডিও সহ অনেক যন্ত্রের প্রয়োজন যেহেতু এক যন্ত্রেই মেটানোর চেষ্টা চলছে। তাই নিয়মিত একে শক্তি জোগানোর ব্যবস্থা করে রাখাটাও জরুরি।
একথা ঠিক যে, বর্তমানে স্মার্টফোনগুলো অনেক বেশি ধারণক্ষমতার ব্যাটারি নিয়ে আসে। সেই সাথে এগুলোর ফাংশনালিটিও কিন্তু আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সবকিছু ঠিকঠাক চালাতে ফোনে যথেষ্ট পরিমাণ চার্জ থাকতে হবে। তো, কীভাবেই বা আপনি আপনার শখের স্মার্টফোনটিকে যত্ন সহকারে উত্তমরূপে চার্জ করার ব্যবস্থা করবেন? আজকের পোস্টটি সেই প্রশ্নের উত্তর দিবে। চলুন দেখা যাক।
কোথায় চার্জ দেওয়ার জন্য কী কিনবেন?
আপনি হয়তো বলবেন ‘কোথায় চার্জ দিবো মানে কী!’ ঘরে বসে ফোনে চার্জ দিবো! কিন্তু আপনাকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, দিনের মধ্যে ২৪ ঘণ্টা কিন্তু আপনি বাসায় থাকবেন না। আপনি যদি হেভি ইউজার হন তাহলে শুধুমাত্র বাসা/অফিসের বাইরেও আপনাকে আপনার ফোন চার্জ করা লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে পাওয়ার ব্যাংক হতে পারে আপনার ভরসা।
অ্যাভারেজ পাওয়ার ব্যাংকে একটু ধীরগতিতে ফোন চার্জ হয়। আবার আপনি পাওয়ার ব্যাংক চার্জ করতেও কিন্তু ভুলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পকেটে আপনার ফোন অনুযায়ী একটা চার্জিং ক্যাবল অবশ্যই রাখা উচিত। পাশাপাশি আপনার গাড়ি থাকলে ফোন চার্জ করার জন্য একটি কার চার্জার রাখতে পারেন। যদি পাওয়ার ব্যাংক বা এক্সট্রা ব্যাটারি ব্যবহার করেন তাহলে ওটার চার্জ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মনে করে আবার ব্যাটারি ফুল করে রাখবেন।
পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় অবশ্যই একটু বেশি দাম দিয়ে হলেও ভালো পাওয়ার ব্যাংকটিই কিনুন। এতে আপনার ফোনও সুরক্ষিত থাকবে আবার দুই দিন পর পর বদলাতেও হবে না। আজকাল বাইরে চলতে ফিরতে পাওয়ার ব্যাংক দিয়ে ফোন চার্জ দিতে গেলে অনেক সময় বন্ধুর ফোনটিও চার্জ দেওয়ার আবদার মেটাতে হয়। সুতরাং এটাও ভাবতে হবে।
এজন্য পাওয়ার ব্যাংক কেনার আগে কমপক্ষে দুটো পোর্ট আছে কি না দেখে কিনবেন। আর আপনার ফোন ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করলে অবশ্যই ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড পাওয়ার ব্যাংক ও চার্জার রাখবেন (পাওয়ার ব্যাংক কেনার সময় এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখুন)। এছাড়া বিভিন্ন দেশের পাওয়ার সকেট বিভিন্ন রকম হয়। তাই দেশের বাইরে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই মনে করে একটি মাল্টিসকেট এডাপ্টার সাথে নিয়ে যাবেন।
ফোন কতক্ষণ চার্জ দেবেন?
আসলে এই প্রশ্নটা কে কখন প্রথম করেছিল তা না বলতে পারলেও অন্তত এটা বলতে পারি- এই প্রশ্নটা করেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একটা কমন ধারণা হলো, ফোন ১০০ পার্সেন্ট ব্যাটারি লেভেল পর্যন্ত চার্জ করা উচিত এবং তা হয়ে গেলে সাথে সাথেই চার্জার থেকে ফোন খুলে ফেলতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু ভিন্ন কথাই বলেন।
আপনি বাংলাটেক এর নিয়মিত ভিজিটর হয়ে থাকলে আপনার হয়ত মনে আছে, বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী আজকালকার স্মার্টফোনগুলোর ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট খুবই উন্নত। ১০০ পার্সেন্ট চার্জ হওয়ার পর অটোমেটিক্যালি চার্জার থেকে ফোনের ব্যাটারিতে চার্জ ফ্লো বন্ধ হয়ে যায়। তাই এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।
তবে অনেক গবেষকের মতে মোবাইল ফোনের ব্যাটারিতে সবসময় ৪০ থেকে ৮০ ভাগ চার্জ রাখাটাই উত্তম। অনেকেই আমরা বাস্তব ক্ষেত্রে এই থিওরি ফলো করি না । অন্যদিকে আমাদের কাছে ১০০ পার্সেন্ট চার্জ করাটাই বেশি সুবিধাজনক মনে হয়। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ারও কারণ নেই। সবসময় ফুল চার্জ করলেও আপনার ব্যাটারি একদম বাতিল হয়ে যাবে তেমনটাও নয়।
স্মার্টফোন চার্জ দেয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো মেনে চলুন
চার্জে দেওয়ার সময় কি ফোন চালানো বন্ধ রাখব?
অনেকেই মনে করেন ফোন যখন চার্জে থাকে তখন ফোন চালানো ঠিক নয়। এটা কিন্তু একেবারে ভুলও নয়! চার্জ হওয়ার সময় ফোন না চালানোই উত্তম। যদিও সাধারণত চার্জে দেওয়ার সময় ফোন চালানো দোষের কিছু নয়। তবে ফোন যদি গরম হওয়ার প্রবণতা থাকে তাহলে চার্জে থাকাকালীন এটা চালালে আরও বেশি গরম হতে পারে। এজন্য চার্জ হয়ে গেলে চার্জ থেকে খুলে ফোন চালানোই উত্তম।
অথরাইজড চার্জার ও ক্যাবল ব্যবহার করুন
স্মার্টফোন চার্জ দেওয়ার সরঞ্জাম যেমন চার্জার, ক্যাবল এসব আপনার ফোনের সাথে সাপোর্টেড কিনা তা খেয়াল রাখুন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি ফোনের সাথে পাওয়া বা ফোন নির্মাতার কাছ থেকে কেনা অরিজিনাল সাপোর্টেড সরঞ্জাম ব্যবহার করা যায়। এছাড়া অনেক থার্ড পার্টি কোম্পানিও অথরাইজড ও নিরাপদ চার্জার, ক্যাবল, প্রভৃতি বিক্রি করে থাকে। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
আশা করি এই পোস্টটি আপনার কাজে লাগবে। আপনি কি এই তথ্যগুলো আগে জানতেন? কমেন্ট করার আমন্ত্রণ রইল!