ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো যাচাই করতে হবে

এনিয়ে কারোই দ্বিমত থাকার কথা না যে, স্মার্টফোন জগতে আইফোন সবসময় সেরার কাতারে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নতুন আইফোন এর বাজারমূল্য অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে ব্যবহৃত আইফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন অনেকেই। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহৃত আইফোন কেনাবেচার একটি বিশাল মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ এবং বিক্রয় ডটকমের কথা বলা যেতে পারে যেখানে মানুষজন ব্যবহৃত আইফোন বেচাকেনা করে থাকেন। সৌন্দর্য আর পারফরমেন্স এর কথা বিবেচনা করে অনেকেই এসব ব্যবহৃত আইফোন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আজ আমরা ব্যবহৃত আইফোন কেনার পূর্বে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।

ফোনের মালিকানা

আপনি যে ব্যবহৃত আইফোনটি কিনতে যাচ্ছেন, সেটি যদি চুরিকৃত হয়, তাহলে এর আসল মালিক যেকোনো সময় ফোনটি ব্লক করে দিতে পারবেন। তাই যার কাছ থেকে কিনছেন, সে আপনাকে কোনো চুরি যাওয়া ফোন ধরিয়ে দিচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই ফোনের মালিকানা নিশ্চিত করা জরুরি। আপনি যে ব্যবহৃত আইফোনটি ক্রয় করতে যাচ্ছেন, সেটির মালিকানা নিশ্চিত করতে নিন্মোক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করুন –

  • ফোনের Settings থেকে General সেকশনে প্রবেশ করুন
  • About সেকশনে প্রবেশ করুন
  • নিচের দিকে স্ক্রল করে IMEI কোডটি খুঁজে বের করুন, যা সাধারণত ১৫ ডিজিটের সংখ্যা হয়ে থাকে
  • IMEI কোডটি কোথাও লিখে রাখুন
  • CTIA Stolen Phone Checker  সাইটে প্রবেশ করে ফোনের IMEI  কোডটি লিখুন
  • এরপর উক্ত ফোন চুরিকৃত ফোন হলে রেড নোটিস এবং চুরিকৃত ফোন না হলে গ্রিন নোটিস দেখতে পাবেন

যদি উক্ত রিপোর্টে গ্রিন নোটিস ব্যতিত অন্যকিছু থাকে, তবে ক্রয়ের জন্য অন্যকোনো ফোন খোঁজাই শ্রেয়।

জেনে রাখা ভালো, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই পদ্ধতিটি পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য না ও হতে পারে। তবে ওখানে রেড নোটিশ এলে সেই ফোন না কেনাই ভালো।

আইক্লাউড লক বা অ্যাক্টিভেশন লক

আইফোন এর অন্যতম নিরাপত্তা ফিচার হচ্ছে এর আইক্লাউড লক অথবা অ্যাক্টিভেশন লক। ফাইন্ড মাই আইফোন ফিচারের মাধ্যমে আইফোন এর মালিক তার অ্যাপল আইডি দিয়ে সাইন-ইন করে ফোনটিকে লক করে রাখতে পারবেন। এরপর কেউ আইফোনটি চালু করতে চাইলে ওই আইক্লাউড লক না খুলে ফোনটি ব্যবহার করতে পারবেন না। ফোনটি চালু করতে চাইলে আইক্লাউডে ঐ অ্যাপল আইডি দিয়ে সাইন ইন করে আগে ফোনটি আনলক করতে হবে।

তাই আইফোন কেনার আগে দেখে নিন এর ফাইন্ড মাই আইফোন বা আইক্লাউড লক খোলা আছে কিনা। যদি লক করা থাকে তাহলে ফোনের যিনি মালিক বা বিক্রেতা, তার কাছ থেকে ওই লকটি খুলে নিন। আইফোন থেকে আইক্লাউড বা অ্যাপল আইডি দিয়ে যত জায়গায় সাইন-ইন করা আছে সব জায়গা থেকে সাইন-আউট করে নিন। ফোনটি পুরোপুরি ফ্যাক্টরি রিসেট করে নিন।

ব্যাটারি হেলথ

আইফোন এর একটি দারুণ ফিচার হল ব্যাটারি হেলথ, যা ব্যবহারের সাথে সাথে ফোনের ব্যাটারির আয়ু পরিমাপ করে ব্যাটারির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা প্রদান করে। আইফোনের ব্যাটারি হেলথ জানতে –

  • Settings এ্যাপ এ প্রবেশ করুন
  • Battery সেকশন থেকে Battery Health এ প্রবেশ করন
  • Battery Health সেকশনে দেখতে পাবেন ফোনের ব্যাটারি হেলথ কতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে

সাধারণত একটি নতুন আইফোন এর ব্যাটারি হেলথ ১০০% থাকে। ফোনের ব্যাটারি হেলথ দেখেই ফোনটি কত সময় ধরে ব্যবহার হয়েছে, তার ও একটি ধারণা পেয়ে যাবেন। উল্লেখ্য যে, ব্যাটারি রিপ্লেস করেও পুনরায় সম্পূর্ণ ব্যাটারি হেলথ ফিরে পাওয়া সম্ভব।

সিম সাপোর্ট

মাঝেমধ্যে অভ্যন্তরীণ ড্যামেজ কিংবা সফটওয়্যার বাগ এর কারণে আইফোনে সিম কাজ করেনা। এছাড়াও অনেক লকড আইফোনে বাইপাস পদ্ধতি ব্যবহার হয়। যার ফলে ফোন ব্যবহার করা গেলেও ফোনে সিম কার্ড সাপোর্ট করেনা। তাই ব্যবহৃত আইফোন কেনার আগে এটি নিশ্চিত করুন, যে ফোনটি আপনি কিনতে যাচ্ছেন সেটিতে সিম ঠিকমত কাজ করবে কি না।

হার্ডওয়্যার এর অবস্থা

ব্যবহৃত আইফোনের বডিতে ছোটখাটো স্ক্র‍্যাচ বা দাগ থাকা সাধারণ ব্যাপার। তবে এসব কোনো ভারী আঘাতের ফলে হয়েছে কিনা, কেনার পূর্বে তা ও নিশ্চিত করা জরুরি। তাই ব্যবহৃত আইফোন কেনার পূর্বে অবশ্যই ফোনের ফিজিক্যাল বাটন, টাচ আইডি/ফেইস আইডি (যদি থাকে), থ্রিডি টাচ সেন্সর, ক্যামেরা লেন্স, ওয়াটার ড্যামেজ সেন্সর পরীক্ষা করে যাচাই করে নিবেন।

স্টোরেজ ক্যাপাসিটি

যেকোনো আইফোন মডেলই বিভিন্ন স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যায়, যা ১৬জিবি থেকে শুরু করে ৫১২জিবি পর্যন্ত বিদ্যমান। আপনার ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে যে আইফোনটি আপনি কিনতে যাচ্ছেন তা যথাযথ কিনা, সেটি নিশ্চিত করে নিন। তবে বর্তমান সময় বিবেচনা করে ৬৪জিবি থেকে কম স্টোরেজযুক্ত আইফোন না কেনাই ভাল।

দাম

যে ব্যবহৃত আইফোনটি আপনি কিনতে যাচ্ছেন সেটির মূল্য নতুন আইফোনের তুলনায় কম হবে, তা ই স্বাভাবিক। তবে আসল বাজারমূল্য থেকে যদি অতিরিক্ত কম দামে ব্যবহৃত আইফোন কেনার জন্য পান, তবে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।

একটি ব্যবহৃত এন্ড্রয়েড ডিভাইস কেনার চেয়ে একটি ব্যবহৃত আইফোন কেনা অনেকটাই জটিল একটা ব্যাপার। তাই ব্যবহৃত আইফোন কেনার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিচার বিবেচনা করে কিনবেন।

Referance: banglatech24

Add Comment

Skip to toolbar