কিভাবে একটি ভালো ছবি তুলবেন

আজ বিকালে কিছু ছবি তুলব……কথাটি মুখে আনতেই নিজের মনের গহিনে একটি গল্প অচিরেই সৃষ্টি হয়ে যায়।এটা হতে পারে একটি সময়ের গল্প,একটি মুহূর্তের গল্প আবার কখনও একটি জীবনের গল্প। আমার এই কাব্যিক কথাগুলি শুনে আমাকে একজন জম্পেশ ফটোগ্রাফার ভেবে বসবেননা। বর্তমান ডিজিটালাইজড যুগে ফটোগ্রাফির বিস্তার সর্বত্র বিদ্যমান। নিজের পছন্দের ক্যামেরাটিতে ক্লিক ক্লিক করতে কার না ভালো লাগে। তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে –

সঠিক নির্দেশনা ব্যতিত গন্তব্য ভূল হবেই।

ঠিক তেমনি ফটোগ্রাফির সঠিক নিয়ম না জানলে মানসম্মত ছবি সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

আপনি যদি নিজেকে একজন পেশাদারী এবং উপযোগী ফটোগ্রাফার হিসাবে গড়ে তুলতে চান কিন্তু কোন সঠিক এবং সাবলীল নির্দেশনা পাচ্ছেননা তবে, এই প্রবন্ধটি আপনার জন্য।

বর্তমানে মূলত দুটি ডিভাইসের মাধ্যমে ফটোগ্রাফির প্রচলন রয়েছে।

  • মোবাইল ফোন এবং
  • ক্যামেরা

ফটোগ্রাফির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই তবে বেশ কিছু দিক-নির্দেশনা রয়েছে যেগুলো প্রয়োগ করলে আপনার ছবিটি  অধিক সুন্দর এবং প্রানবন্ত হয়ে উঠবে। বাস্তবতা এটাই যে, ফটোগ্রাফির জগতে নূতনত্ব সর্বদা বিদ্যমান। তারপরও যুগে যুগে সফল ফটোগ্রাফাররা এসকল নির্দেশনা অনুসরণ করে আসছেন।

নির্দেশনা গুলি-

১) সরলীকরণঃ

সরল মানেই সচ্ছতা। বলতে বাঁধা নেই যে, সাধারণ ছবি সবসময় অধিক আকর্ষনীয় হয়। ছবির দর্শকের সহজ বধোগম্যতার জন্য ফ্রেমটাকে সরল রাখায় সচেষ্টা থাকতে হবে। ছবিকে মুগ্ধকর করার জন্য ছবিতে এলিমেন্ট কম রাখাই শ্রেয় । যে কোন অপ্রয়োজনীয় কিছু ফ্রেম থেকে বাদ দিতে হবে।

২) অবস্থানঃ

ছবির ফরগ্রাউন্ড, মিডলগ্রাউন্ড ও ব্যাকগ্রাউন্ড খুবই মনোযোগের বিষয়। পৃথক পৃথক লেয়ার খুব সহজেই দর্শকের মনে দূরে এবং কাছে্র অনূভূতি জাগিয়ে তোলে।

৩) প্যাটার্নঃ

আমাদের প্রাকৃতিক কাঠামো এবং চারপাশে নানা রকম প্যাটার্ন রয়েছে, যেগুলো ফ্রেমে বন্দি করে আমরা অসাধারণ ছবি আমরা আমাদের ফ্রেমে বন্দি করতে পারি। তবে ছবিতে আরো ভিন্নরকম স্বাদ যোগ করতে খুজে বের করতে পারি ভিন্নরকম প্লাটফরম যেটা আমাদের চিন্তাধারার পেছনে রয়ে যায়। সুতরাং, এটা সুস্পস্ট যে, ছবির ভিন্ন স্বাদ দর্শকের দৃষ্টিকে মুগ্ধ করতে সক্ষম।

৪) পূর্ণ ফ্রেমঃ

ছবির ফ্রেম পূর্ণ থাকা খুবী জরুরী। ছবির ফ্রেম ফাকা থাকলে দর্শকের কাছে ছবির মান ক্রমশ নিম্ন হতে থাকবে।ছবিতে ম্যাটেরিয়ালস কম থাকলে মূল সাবজেক্ট দিয়েই ফ্রেমটি পূর্ণ করার চেষ্টা করুন। এই পদ্ধতিতে আপনার ছবির মান অক্ষুন্ন থাকবে।

৫) অতিরিক্ত অবজেক্টঃ

অনেক ক্ষেত্রে ছবির ফ্রেম পূর্ণ করার জন্য অতিরিক্ত অবজেক্ট আনা যেতে পারে। এতে করে ছবির মান এবং শোভা বজায় থাকবে। তবে মূল সাবজেক্টের দিকে ফোকাস অব্যহত রাখতে হবে।

৬) মূল এলিমেন্ট এবং লাইনসঃ

একটি ছবিতে Straight, diagonal, curvy, zigzag, radial ইত্যাদি বিভিন্ন রকম লাইন থাকে। এগুলির সঠিক ব্যবহার একটি ছবির কম্পোজিশন বর্ধন করতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। একটি ছবির দিকে তাকালে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু লাইন আমাদের চোখে পড়ে। একজন দক্ষ ফটোগ্রাফারের সবসময় উচিত ছবির লাইনগুলি ছবির মুল সাবজেক্টের দিকে নিয়ে যাওয়া। এতে করে দর্শকের পক্ষে ছবির মূল ভাষা বুঝতে সহজ হবে।

৭) আকর্ষণীয় প্রভাব তৈরিতে আলো ব্যবহার করুনঃ

ভাবুন আপনার কাছে আলো যথেষ্ট পরিমাণে আছে কিন্ত আলোকপাতের আরও অনেক কিছুই রয়েছে। আপনি বিভিন্ন আকর্ষণীয় উপায়ে হালকা ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার ফটোগুলির মেজাজকে পুরোপুরি পরিবর্তন করতে পারে। একবার আপনি এই প্রভাবগুলি তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখুন, পরে এটি আপনার ফটোগ্রাফগুলিকে পেশাদার দেখাবে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু কৌশল যা আপনি চেষ্টা করতে পারেন সেগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • সোনালী আলোর সময় শুটিং করুন
  • একটি সিলুয়েট তৈরি করুন
  • শক্ত আলোতে ছবি তুলুন

৮) জুম ইফেক্ট এবং সাটার স্পিডঃ

জুম ইফেক্ট অতি প্রয়োজনীয়।কখনো অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার না করে নিজের কাজের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। সাটার খোলা থাকা পর্যন্ত ক্যামেরা নাড়ানো যাবে কারন এটি আলোর স্থানগুলি গতিশীল আ্লোকপথ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। এক্সপোজার বেশী পাওয়ার জন্য সাটার স্পিড কম ব্যবহার করতে হবে।

৯) মোড নির্বাচনঃ

এপেরচার প্রায়োরিটি মোডটি নির্বাচন করুন। এরপর এপারচার ২২ এবং মূল বিষয়ের উপর ফোকাস করতে হবে। সাটার রিলিজ চেপে ধরে ছবি তুলতে হবে। আলোকরশ্মির ভালো ইফেক্ট পাওয়ার জন্য ছবি ওঠানোর সময় জুম বেশি বা কম করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রোটেন ইফেকশন ব্যবহার করা যেতে পারে।

১০) ঘরে ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করাঃ

ফ্ল্যাশ কঠোর এবং অপ্রাকৃত চেহারা বিশেষত ইনডোর প্রতিকৃতির জন্য দেখতে পারে। অতএব, বিভিন্ন উপায় রয়েছে যে আপনি ফ্ল্যাশ অবলম্বন না করে বাড়ির অভ্যন্তরে কোনও চিত্র নিতে পারেন। প্রথমে, আইএসওকে ধাক্কা দিন – সাধারণত আইএসও 800 থেকে 1600 আপনি চয়ন করতে পারেন, শাটারের গতির জন্য একটি বড় পার্থক্য আনবে। আরও প্রশস্ত অ্যাপারচারটি ব্যবহার করুন – এইভাবে আরও হালকা সেন্সরে পৌঁছে যাবে এবং আপনার সুন্দর ঝাপসা ব্যাকগ্রাউন্ড হবে।

১১) শেখার ক্ষেত্রে আরও সময় যোগ করুনঃ

আপনি নতুন ক্যামেরা এবং লেন্সে হাজার অর্থ ব্যয় করার কথা ভাবছেন তবে দুবার চিন্তা করুন। আপনি স্ট্যান্ডার্ড জুম লেন্স লাগানো একটি পরিমিত ডিজিটাল ক্যামেরা সহ গর্বিত হয়ে উঠতে পারেন, এমনকি অত্যাশ্চর্য ছবি তুলতে পারেন। তবে আপনার বেসিকগুলি সম্পর্কে একটি দৃঢ় ধারণা থাকা দরকার। এ কারণেই নতুন গিয়ারে কোনও কিছু ব্যয় করার আগে, রচনা ও আলোকে আয়ত্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

১২) পেশাদারদের মতো ছবি সম্পাদনা করতে শিখুনঃ

এটি কেবল পেশাদার ছবি তোলা সম্পর্কেই নয়। পেশাদারদের মতো ছবিগুলি কীভাবে সম্পাদনা করতে হয় তাও আপনার শিখতে হবে।

ফটোশপ পেশাদার ফটোগ্রাফারের সেরা বন্ধু। ব্যবহারিকভাবে যেকোন চিত্র এডিটে উপকার পেতে পারেন, ছবি কাটা, উজ্জ্বলতা সামঞ্জস্য, রঙ সংশোধন বা অন্যান্য টুইটগুলি।

সুতরাং প্রোগ্রামটি কীভাবে সক্ষম তা শেখার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করা উচিত। অ্যাডোব ওয়েবসাইটে এবং অনলাইনে প্রচুর সহায়ক টিউটোরিয়াল উপলব্ধ। যদি আপনার ফটোশপে অ্যাক্সেস না থাকে এবং এতে অর্থ ব্যয় করতে আপনি ইচ্ছুক না হন,তবে অনেকগুলি ফ্রি ফটোশপের বিকল্প রয়েছে।সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি হল জিআইএমপি।

how to photography

এক ঝলকে কিছু বিশেষ নির্দেশনাঃ

  • সর্বদা নিজের ক্যামেরাটিই ব্যবহার করুন
  • সেটিংস এর সকল ব্যবহার আয়ত্ত করুন
  • আলোর দিকে সবসময় মনোযোগ দিন
  • পর্যাপ্ত সময় নিন
  • সময়মত পা নাড়িয়ে নিন
  • ট্রিপড এবং ফ্লাশ এর সঠিক ব্যবহার শিখে নিন
  • ক্যামেরার লেন্সটি পরিষ্কার করে নিন
  • ভালো মানের ফিল্টার ব্যবহার করুন
  • নিজের ছবি গুলিকে অন্যত্র সংরক্ষণ করুন
  • প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শিখুন এবং আবিস্কার করুন
  • অন্যান্য ফটোগ্রাফারদের অনুসরণ করুন
  • অবসর সময়ে নিজের কাজ নিয়ে ভাবুন এবং ভুলগুলি শুধরে নিন
  • একঘেয়েমিকে বিদায় দিন
  • কাজকে ভালবাসুন এবং উপভোগ করুন

 

নিজের দক্ষতাকে যাচাই করুন এবং সফলতার পথে অগ্রসর হোন।

আরও পড়ুন।

নিয়ে নিন মোবাইল ফোটোগ্রাফির জন্য সেরা lightroom preset 

 

Add Comment