গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কিভাবে আয় করা যায় মাসে ২০ হাজার টাকা

ডিজিটাল বিশ্বে অন্যান্য স্কিল এর পাশাপাশি ব্যাপক চাহিদা রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কিত স্কিলের। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন পারেন, তবে ঘরে বসে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন। কথাটা যদিও গ্রাফিক ডিজাইন, তবে আমাদের দেশে গ্রাফিক্স ডিজাইন নামে পরিচিত হয়ে গেছে। আমরা এখানে উভয় শব্দই ব্যবহার করছি।

গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত কিছু সাধারণ প্রশ্ন সবার মনেই থাকে। যেমনঃ

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন কি?
  • গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে আয় করার উপায় কি?
  • অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইন করে টাকা আয় করার উপায় কি?
  • গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার উপায় কি?
  • ঘরে বসে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ করে আয় করা সম্ভব কি?

আমরা খুঁজেছি আপনাদের এইসব প্রশ্নের উত্তর আর খুঁজে বের করেছি ১০টি উপায় যার মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ করে আয় করা যাবে।

তো চলুন শুরু করা যাক। আশা করছি টেকটিউনস এর এই টিউন আপনার উপকারে আসবে।

গ্রাফিক ডিজাইন কি?

গ্রাফিক ডিজাইন কি

গ্রাফিক ডিজাইন হচ্ছে একটি পেশা বা একাডেমিক ক্ষেত্র যেখানে কলা (আর্ট) এবং বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে কোনো একটি ধারণা দৃশ্যমান করে তুলে ধরা হয়। আমরা যে বিভিন্ন কোম্পানির লোগো দেখি কিংবা বিভিন্ন রকমের বিজ্ঞাপনের ছবি দেখি, গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে এগুলো (অন্তত বিশাল একটা অংশ) করা হয়।

গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে আয় করার উপায় জানার আগে অবশ্যই নিশ্চিত করুন আপনার কাজের মান। এক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ডিজাইন ভালো বুঝে, এমন একজনকে মেন্টর হিসেবে রাখতে পারেন। এছাড়াও গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করতে গেলে অবশ্যই দরকার পড়বে একটি কম্পিউটারের।

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে আয় করার উপায়সমুহ সম্পর্কে।

১। ফ্রিল্যান্সিং করে গ্রাফিক ডিজাইন থেকে ইনকাম

ফ্রিল্যান্সিং করে গ্রাফিক ডিজাইন থেকে ইনকাম

অন্যসব স্কিলের মতো গ্রাফিক্স ডিজাইন এর ক্ষেত্রেও ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সার, পিপল পার আওয়ার, আপওয়ার্ক এর মতো ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে খুব সহজেই একাউন্ট খুলে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী কাজ দেখে বিডিং করে কাজ পেতে পারেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে।

কোনো কাজ বা প্রজেক্ট পেতে হলে অবশ্যই আপনার একটি পোর্টফোলিও থাকা জরুরি। এছাড়াও পুর্বে করা কাজসমূহও তুলে ধরতে পারেন, যা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে কাস্টমারকে আপনার দিকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। এক্ষেত্রে পোর্টফোলিও তৈরি করার জন্য ড্রিবল (Dribbble), বিহ্যান্স (Behance) প্রভৃতি সাইট ব্যবহার করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং এর শুরূ টা কিভাবে করবেন

২। গ্রাফিক্স ডিজাইন সার্ভিস

গ্রাফিক্স ডিজাইন সার্ভিস

ফাইভার এর মতো একটি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত সার্ভিস সেল করা যায়। এছাড়াও নির্দিষ্ট গ্রাফিক ডিজাইন সার্ভিসকে কেন্দ্র করে সার্ভিস প্যাকেজ অর্থাৎ গিগ তৈরী করতে পারবেন।

আপনি যদি অভিজ্ঞ গ্রাফিক ডিজাইনার হন, সেক্ষেত্রে একাধিক গ্রাফিক্স ডিজাইন সার্ভিস প্রদানে আপনার সমস্যা হওয়ার কথা না। তৈরী করুন নির্দিষ্ট সেবাভিত্তিক গিগ, যেমনঃ

  • প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যাক্তির জন্য লোগো তৈরী
  • বিজনেস কার্ড তৈরী
  • ফ্লায়ার তৈরী
  • ব্যানার তৈরী
  • বিজ্ঞাপন তৈরী, ইত্যাদি

আপনার সার্ভিস যাদের প্রয়োজন হবে, তারা আপনার গিগ দেখে ইন্টারেস্টেড হলে আপনি কাজ পেয়ে যাবেন অল্প সময়েই। ফাইভার এ ৫ ডলার থেকে শুরু করে হাজার হাজার ডলার মূল্যের গিগ সেট করতে পারেন।

এছাড়াও আপনি যদি সবেমাত্র ফাইভারে গিগ খুলে থাকেন, সেক্ষেত্রে ইতিমধ্যে শীর্ষে থাকা গিগগুলোকে অনুসরণ করে গিগ তৈরী করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে আপনি adfly থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনকাম করবেন

৩। এনভাটো অথোর

এনভাটো অথোর

এনভাটো হলো একাধিক মার্কেটপ্লেসের সমন্বয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্ক যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন তাদের ডিজিটাল অ্যাসেট ও সার্ভিস বিক্রি থাকেন। ফটোশপে করা এডিটেড ফটো থেকে শুরু করে ওয়েবসাইটের জন্য তৈরী স্ক্রিপ্ট পর্যন্ত সবকিছুই বিক্রি সম্ভব এনভাটো মার্কেটে।

এনভাটো মূলত অনেকগুলো সাইটের একটি নেটওয়ার্ক। গ্রাফিকরিভার এইসব ওয়েবসাইটের মধ্যে একটি। মূলত ডিজাইনারদের তৈরী লোগো, আইকন, ফন্ট, ভেক্টর, বিজনেস ফ্লায়ার এবং অন্যান্য গ্রাফিক অ্যাসেট বিক্রি হয়ে থাকে গ্রাফিকরিভার এ।

আরো পড়ুনঃ ফেসবুক পেজ থেকে আয় করার সেরা ৭টি উপায়

৪। টিশার্ট ডিজাইন করে আয়

টিশার্ট ডিজাইন করে আয়

নজরকাড়া ডিজাইনের টিশার্ট এর ডিমান্ড দিনদিন বেড়েই চলেছে। টিশার্ট নিজে ডিজাইন করে তা বিক্রি করার মাধ্যমেও গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করা সম্ভব। টিশার্ট ডিজাইন এর ক্ষেত্রে সুবিধা হলো এই যে আপনাকে সবসময় একটিভভাবে কাজ করতে হচ্ছে না।

একবার টিশার্ট ডিজাইন করেই আপনার কাজ প্রায়ই শেষ। এরপর বাকি প্রসেস বলতে গেলে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনার সমস্যার ব্যাপারই নয়।

এমন কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে খুব সহজেই একটি অনলাইন শপ তৈরী করে টিশার্ট বিক্রি সম্ভব। যেমনঃ

  • প্রিন্টফুলঃ আপনার ডিজাইন করা শার্ট আপনার ব্র‍্যান্ড লেবেলের অধীনেই ড্রপশিপিং করে ওয়েবসাইটটি
  • স্পেডশার্টঃ কাস্টম ডিজাইন করা টিশার্ট বিক্রি করা যাবে
  • থ্রেডলেসঃ আপনি টিশার্ট ডিজাইন করে তা ভোটিং এর জন্য আপলোড করবেন। আপনার ডিজাইন করা শার্ট ভোটের মাধ্যমে সেরা বিবেচিত হলে উক্ত ডিজাইনের শার্ট তৈরী করে সেল করা হবে

আপনার ডিজাইন করা ইউনিক ফটো, ফন্ট, টাইপোগ্রাফি, ইত্যাদিযুক্ত টিশার্ট বানাতে পারেন ও বিক্রি করে আয় করতে পারেন একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে। এছাড়াও যেসব ক্ষেত্রে টিশার্ট এর ভালো ডিমান্ড আছে, সেসবের ভিত্তিতে টিশার্ট তৈরী করেও তা বিক্রি করতে পারবেন।

৫। গ্রাফিক্স ডিজাইন কনটেস্ট

৯৯ডিজাইনস৪৮আওয়ারস লোগোক্রাউডস্প্রিং এর মতো অনেক ওয়েবসাইটেই গ্রাফিক্স ডিজাইন কনটেস্ট হয়ে থাকে। এসব ডিজাইন কনটেস্ট জিতেও ঘরে বসেই গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমে আয় করা সম্ভব।

এইসব সাইটে মূলত ক্লায়েন্টগণ তাদের ক্রিয়েটিভ প্রজেক্টের প্রয়োজনে পোস্ট করে থাকেন। ফ্রিল্যান্সারগণ বিনামূল্যে তাদের ডিজাইন সাবমিট করে থাকেন। এরপর ক্লায়েন্টগণ সাবমিট করা সকল সাবমিশন চেক করে তাদের পছন্দেরটি বেছে নেন ও কনটেস্টের প্রাইজ প্রদান করেন।

এই ধরনের ডিজাইনিং কনটেস্টে অংশগ্রহণের সুবিধা হলো গ্রাফিক্স ডিজাইন করে আয় করার পাশাপাশি রয়েছে শেখার সুযোগ ও দ্রুত কাজ করার সক্ষমতার শিক্ষা অর্জন। এছাড়াও পোর্টফোলিও তৈরীতে বেশ কাজে দেয় এসব কনটেস্ট।

আরো পড়ুনঃ অনলাইন ইনকাম ও সেরা ৫ টি উপায়

৬। ড্রিবল ও বিহান্স

নিজেদের অসাধারণ কাজগুলো পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার অসাধারণ দুটি ওয়েবসাইট হলো ড্রিবল ও বিহেন্স। এই প্ল্যাটফর্ম দুটি হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিয়েটিভ নেটওয়ার্ক।

স্পেশাল প্রজেক্ট ও চলমান কোলাবোরেশান এ কাজ করার জন্য ড্রিবল ও বিহেন্স জব বোর্ডে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার পোস্ট দেখতে পাবেন। ড্রিবল ও বিহ্যান্সে থাকা আপনার পোর্টফোলিওকে কাজে লাগিয়ে পেতে পারেন এসব কাজ।

৭। অন্যকে গ্রাফিক ডিজাইন ট্রেনিং দেয়া বা শেখানো

সার্ভিস হিসেবে যেমন গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে, একইভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার জন্য মানুষের আগ্রহের অভাব নেই। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইন খুব ভালোভাবে বুঝেন, তবে অন্যদের গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখিয়েও আয় করতে পারেন।

অন্যকে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখানোর কাজটি আপনি সরাসরি, বা অনলাইনেও করতে পারেন। এমনকি আপনি চাইলে অনলাইন কোর্স তৈরী করতে পারবেন যা অন্যরা টাকার বিনিময়ে কিনতে পারবে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কিত ফেসবুক গ্রুপ ও ওয়েবসাইটগুলোতে অনেকেই শেখার জন্য টিউটর খুঁজে থাকেন। একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং কোর্স কিংবা টিউশান অফার করতে পারেন যার থেকে ভালোই আয় সম্ভব।

৮। ইউটিউব

পৃথিবীতে বর্তমানে সর্ববৃহৎ ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মই হচ্ছে ইউটিউব। গ্রাফিক্স ডিজাইন হিসেবে বিভিন্ন মজার ও উপভোগ্য কনটেন্ট তৈরী করে অন্যদের আনন্দ দেওয়ার মাধ্যমে আপনিও আয় করতে পারেন।

যেহেতু ইউটিউবে আয় করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে এই গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আয় করার উপায়ের তালিকার অন্য যেকোনো একটির পাশাপাশি ইউটিউব চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ ইউটিউব মার্কেটিং কি, কেন, কিভাবে প্রশ্ন ও উত্তর

৯। ওয়েবসাইট

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলোতে কাজ করার ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটগুলো একটি নির্দিষ্ট অংক কেটে নেয়। কিন্তু আপনি নিজের ওয়েবসাইট খুলে আপনার গ্রাফিক্স ডিজাইন সার্ভিস প্রদান করলে পুরো অর্থটাই আপনার কাছেই থেকে যাচ্ছে। এছাড়াও আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের গিফট ক্যাম্পেইন আয়োজন করে এনগেজমেন্ট বাড়াতে পারেন।

আপনার ওয়েবসাইট থেকে যারা সার্ভিস গ্রহণ করবে তাদের ডিসকাউন্ট দিয়ে আপনার কাছে সরাসরি কাজ দেওয়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার ওয়েবসাইটে আপনার কাজসমুহ প্রদর্শনের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাস বা অনলাইন কোর্স সেল করার সুবিধা তো থাকছেই।

শেষকথা

গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে যাত্রার শুরুতে কাজ পেতে ভালোই বেগ পেতে হতে পারে। এক্ষেত্রে আকর্ষণীয় পোর্টফোলিও থাকলে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ ভালো এডভান্টেজ পাওয়া যায়।

তাই গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে সেরা সিদ্ধান্ত হচ্ছে কাজের পাশাপাশি নিজের পোর্টফোলিও গড়ে তোলা। সময়ের সাথে সাথে ভালো পোর্টফোলিও গড়ে তুলতে পারলে কাস্টমারই আপনাকে কাজের জন্য খুঁজবে।

Add Comment

Skip to toolbar