অ্যাপল ডিভাইস বা অ্যাপল এর যেকোনো সার্ভিস ব্যবহার করতে “অ্যাপল আইডি” থাকা আবশ্যক। অ্যাপল আইডি হলো আপনার অ্যাপল একাউন্ট যার মাধ্যমে আইক্লাউড থেকে শুরু করে ফাইন্ড মাই সার্ভিস পর্যন্ত সকল অ্যাপল সার্ভিস ব্যবহার করা যায়। তাই অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা হোক, কিংবা হারানো আইফোন খুঁজে বের করা, একটি অ্যাপল ডিভাইসের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই অ্যাপল একাউন্টের প্রয়োজন রয়েছে।
এপল আইডি তৈরি করা সম্পূর্ণ ফ্রি। সকল অ্যাপল ডিভাইসের উপযুক্ত ব্যবহার করতে অ্যাপল আইডিতে সাইন ইন করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় অ্যাপল ডিভাইস ব্যবহারের সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা পাওয়া সম্ভব নয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক অ্যাপল আইডি কিভাবে খুলতে হয়, কেনো এপল আইডি দরকার, ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত।
অ্যাপল আইডি খোলার নিয়ম – How to open an Apple ID
অ্যাপল আইডি বা অ্যাপল একাউন্ট খোলা বেশ সহজ। অ্যাপল আইডি খুলতে অ্যাপল একাউন্ট খোলার ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন। এছাড়াও আইওএস চালিত ডিভাইসে অ্যাপল আইডি তে লগিন এর সময় “Forgot password or don’t have an Apple ID?” অপশনে ট্যাপ করে Create a free Apple ID সিলেক্ট করে নতুন অ্যাপল একাউন্ট খোলা যাবে।
অ্যাপল একাউন্ট খুলতে প্রয়োজন হবে একটি ইমেইল এড্রেস ও একটি ফোন নাম্বারের। অ্যাপল আইডি খোলার বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন অ্যাপল এর ওয়েবসাইটে।
কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে বা বাংলাদেশের এড্রেস প্রদান করে অ্যাপল আইডি তৈরিতে বেশ সমস্যায় পড়তে দেখা যায় বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের। এর কারণ হলো বাংলাদেশে এখনো অ্যাপল এর অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু না হওয়া। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে অনেকে অন্য দেশের ঠিকানা ব্যবহার করে অ্যাপল আইডি তৈরি করে থাকেন।
[★★] মোবাইল দিয়ে টাকা আয় করার উপায় জানতে এখানে ক্লিক করুন
আপনি যেখান থেকে অ্যাপল ডিভাইস কিনেছেন তাদের সাথে কথা বললেই তারা আপনাকে সঠিক অ্যাপল আইডি খোলার ব্যাপারে সহায়তা করবেন।
একাধিক অ্যাপল আইডি তৈরি করা সম্ভব কি?
হ্যাঁ, একাধিক অ্যাপল আইডি তৈরি করা যাবে। কিন্তু সকল অ্যাপল ডিভাইসে সার্ভিসসমূহ যাতে সুন্দরভাবে Sync হয়, তা নিশ্চিত করতে ব্যক্তিগত সকল অ্যাপল ডিভাইসে একই অ্যাপল আইডি ব্যবহার করা উত্তম।
অ্যাপল আইডি কেন দরকার?
অ্যাপল ডিভাইস, যেমনঃ আইফোন, আইপ্যাড, ইত্যাদি বা অ্যাপল এর সার্ভিস, যেমনঃ অ্যাপল টিভি+, আইক্লাউড, ইত্যাদি ব্যবহার করতে হলে একটি অ্যাপল আইডি থাকা আবশ্যক। অ্যাপল আইডি ডিভাইসে ফাইন্ড মাই ব্যবহার করে ফোন নিরাপদ রাখতে, সেটিংসসমূহ সকল ডিভাইসে সিঙ্ক করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও অ্যাপ স্টোর থেকে কেনা অ্যাপ কিংবা অন্য অ্যাপল সার্ভিসসমূহ সকল ডিভাইসে একইভাবে ব্যবহার করা যায়। ধরুন আপনার ম্যাক কম্পিউটার ও আইফোনে একই অ্যাপল আইডি লগিন করা আছে। সেক্ষেত্রে ম্যাকের নোটস অ্যাপে কিছু লিখলে তা আইফোনের নোট অ্যাপে সিঙ্ক হয়ে চলে আসবে। আবার আইক্লাউডে আপলোড থাকা ছবি সকল অ্যাপল ডিভাইস থেকে অ্যাকসেস করা যাবে।
মোট কথা, অ্যাপল ইকোসিস্টেম এর প্রাণশক্তি হিসেবে সকল ডিভাইসকে একই ছায়ার নিচে নিয়ে আসে অ্যাপল আইডি। অর্থাৎ অ্যাপল আইডি ছাড়া অ্যাপল ডিভাইসসমূহ ব্যবহারের আসল অভিজ্ঞতা পাওয়া বলতে গেলে অসম্ভব।
অ্যাপল আইডি এর পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে কি হবে?
অ্যাপল আইডি পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে Forgotten Password ফিচার ব্যবহার করে যেকোনো অ্যাপল ডিভাইস বা ওয়েব থেকে পাসওয়ার্ড রিসেট করা যাবে। তবে অধিকবার ভুল লগিন এটেম্পট করলে সেক্ষেত্রে অ্যাপল একাউন্ট লক হয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থায় অ্যাপল প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
এপল আইডি এর ব্যবহার
অ্যাপল ডিভাইস ও সার্ভিসসমূহের সেতু হিসেবে কাজ করে অ্যাপল আইডি – এই বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। এবার জেনে নেওয়া যাক মূলত কি কি কাজে লাগে এই অ্যাপল আইডি। নিম্নে অ্যাপল আইডি এর কিছু সাধারণ ব্যবহার উল্লেখ করা হলোঃ
- আইক্লাউড সার্ভিস চালু থাকাকালীন কন্টাক্ট, ফটো, ফাইল, মেসেজ, ব্যাকাপ, ইত্যাদি কনটেন্ট সিঙ্ক করা
- ফাইন্ড মাই ব্যবহার করে হারানো বা চুরি হয়ে যাওয়া ডিভাইস খোঁজা
- অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড বা কেনা
- অ্যাপল স্টোর থেকে প্রোডাক্ট কেনা
- অ্যাপল মিউজিক, অ্যাপল টিভি+, অ্যাপল অরকেড, ইত্যাদি অ্যাপল সার্ভিস ব্যবহার
- হারানো ডিভাইসের ব্যবহার রুখে দিতে ডিভাইস লক করা
অ্যাপল আইডি ব্যবহার করে কেনা যেকোনো অ্যাপল সার্ভিস উক্ত একাউন্ট লগিন থাকা প্রত্যেক অ্যাপল ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আপনার যদি অ্যাপল মিউজিক সাবস্ক্রিপশন থাকে, তবে আইফোন, আইপ্যাড সহ যেকোনো অ্যাপল ডিভাইসে অ্যাপল মিউজিক ব্যবহার করতে পারছেন। আবার অ্যাপ স্টোর থেকে কোনো অ্যাপ কিনে থাকলে তা উক্ত একাউন্ট লগিন থাকা প্রতিটি ডিভাইসে ইন্সটল করা যাবে।
👉 সোশ্যাল মিডিয়া থেকে টাকা আয়ের উপায়
অ্যাপল একাউন্টের নিরাপত্তা বাড়াতে করণীয়
অ্যাপল আইডিতে একজন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, যেমনঃ ফটো, ভিডিও, কন্টাক্ট, মেসেজ, ইত্যাদি সংরক্ষিত থালে। তাই অ্যাপল একাউন্টে থাকা এসব ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়তি পদক্ষেপ হিসেবে অ্যাপল এর টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবহার করা উচিত।
টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন ব্যবহারকারীর যেকোনো অ্যাপল ডিভাইস বা ফোন নাম্বার ব্যবহার করে একাউন্টের কোনো পরিবর্তন আনার আগে আইডেন্টিটি ভেরিফাই করে। যেমনঃ আইক্লাউড এ সাইন ইন করা বা অ্যাপ স্টোর বা আইটিউনস এর মাধ্যমে নতুন ডিভাইস থেকে পারচেজ করার ক্ষেত্রে ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে।
এছাড়াও অ্যাপল ডিভাইস হারিয়ে গেলে অন্য কেউ যাতে অ্যাকসেস করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন কাজে আসবে। অ্যাপল আইডি তে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।
উল্লেখ্য যে, ব্যবহারকারীর কাছ থেকে অ্যাপল আইডি এর তথ্য কখনো চাওয়া হয়না অ্যাপল এর পক্ষ থেকে। তাই অ্যাপল আইডি এর তথ্য পরিবার, বন্ধুসহ কাউকেই কখনো প্রদান করবেন না। কোনো ধরণের ফিশিং স্ক্যাম থেকে বাঁচতে অ্যাপল আইডি এর পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোয়েশন, ভেরিফিকেশন কোড, ইত্যাদি তথ্য থার্ড-পার্টিকে প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন।
আইওএস ১৫ তে অ্যাকাউন্ট রিকভারি কন্টাক্ট নামে একটি ফিচার যোগ করে অ্যাপল, যা পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ও সেকেন্ডারি কোনো অ্যাপল ডিভাইস না থাকলে সেক্ষেত্রে একাউন্ট রিকভারিতে সাহায্য করবে। অ্যাপল ডিভাইস থেকে অ্যাপল একাউন্টের সেটিংস থেকে Password & Security সেকশনে প্রবেশ করে Account Recovery সিলেক্ট করার পর “+” বাটনে ট্যাপ করে রিকভারি কনটাক্ট এড করতে পারবেন। এই ফিচারটি বর্তমানে শুধুমাত্র আইওএস ১৫ চালিত ডিভাইসসমূহে কাজ করছে।
অন্যের অ্যাপল আইডি ব্যবহার
ইন্টারনেটে বিভিন্ন ফোরাম বা ফেসবুক গ্রুপে অনেকে অ্যাপল আইডি শেয়ার করে থাকেন। এসব অ্যাপল আইডি’তে বিভিন্ন পেইড গেম বা অ্যপ কেনা থাকে, যা ব্যবহার করে যেকোনো ব্যবহারকারী তার ফোনেও বিনামূল্যে পেইড গেম বা অ্যাপ ইন্সটল করতে পারেন। অ্যাপল স্টোর থেকে পেইড গেম বা অ্যাপ ডাউনলোড করার এই অভিনব পদ্ধতি শুনতে সমস্যাহীন মনে হলেও আসলে তা নয়।
যেহেতু এসব অ্যাপল আইডি শেয়ার করা ব্যক্তিকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন না, তাই তাদের অ্যাপল আইডি আপনার আইওএস চালিত ডিভাইসে এড না করাই শ্রেয়। আবার যার একাউন্ট আপনি এড করেছেন, তিনি চাইলে যেকোনো সময় আপনার ডিভাইস লক করে দিতে পারবেন। তিনি তার অ্যাপল আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেললে আপনার আইফোন থেকে সেই আইডি আর মুছতে পারবেন না। ফলে আপনি বিভিন্ন সমস্যায় পড়বেন। তাই নিজের ডিভাইসের নিরাপত্তা রক্ষা করতে চাইলে পেইড অ্যাপ বা গেমের লোভে অন্যের একাউন্ট নিজের অ্যাপল ডিভাইসে এড করা থেকে বিরত থাকুন।