ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত তথ্য, যা জীবন বদলে দিতে পারে

নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং গাইড লাইনঃ

আমি যে কথা গুলো বলব তা ধৈর্য্য সহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

কচ্ছপের কোন দাঁত নাই। কিন্তু তার চোয়াল অনেক শক্ত। কেমন শক্ত? Discovery চ্যানেলে অনেকেই কচ্ছপকে দেখেছেন, কামড় দিয়ে হাড় ভেঙ্গে দিতে। বলা হয় কচ্ছপ কাউকে রাগ করে কামড় দিয়ে ধরলে, তাকে আর ছাড়ে না। তখন পরিত্রাণের একটাই উপায় তার গলা কেটে ফেলা।

শিক্ষণীয়ঃ আপনি যদি কচ্ছপের মত লেগে থাকতে পারেন, তবে ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য

কেন এই লেখা লিখছি?

প্রতিদিন অনেকেই আমাকে ইনবক্স করেন, ফ্রিলান্সিং কিভাবে সহজে শেখা যায়? কোন কাজ সব থেকে সহজ? কত দিনে ইনকাম করা যায়? আমি কি কাজ করি? আমার ইনকাম কত? আমার ফোন নম্বর দেয়া যাবে কিনা? কিছু কাজ দিতে পারব কিনা? ইত্যাদি ইত্যাদি।

সবার উত্তর দিতে পারিনা। যারা এই ধরনের প্রশ্ন করেন, আমার মতে ফ্রিলান্সিং তাদের জন্য না। আমি এর আগে কয়েকটি চাকরি করেছি, ব্যাবসা করার অভিজ্ঞতাও আছে। আমার কাছে সব থেকে কঠিন কাজ মনে হয়েছে এই ফ্রিলান্সিং। সত্যি কথা বলতে এটা এত কঠিন, আগে জানলে, আমি এই লাইনেই আসতাম না।

নতুন কিছু শিখতে কেমন সময় লাগে?

“৭ দিনে ফ্রিল্যান্সিং শিখুন” বা “এক মাসে ফ্রিল্যান্সিং শিখুন” বা মাত্র তিন দিনে গ্রাফিক ডিজাইনার হন, এই টাইপের টাইটেল দেখে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আগ্রহী হচ্ছে। চটকদার বিজ্ঞাপনে ফাঁদে পড়ে, অনেকেই হয়তো এসব ট্রেনিং সেন্টার থেকে ট্রেনিং ও নিয়েছে। কিন্তু আসলেই কি ৭ দিনে শিখা যায়? উত্তর হচ্ছে, না। আসলে ফ্রিল্যান্সিং কি, কি ভাবে করা যায়, কিভাবে অনলানে ক্যারিয়ার গড়া যায় এসব জানতে ৭ দিন লাগে না।

একটু ঘাঁটা ঘাঁটি করলে কয়েক ঘন্টাই যথেষ্ট। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যে জ্ঞান লাগে, যে দক্ষতা লাগে, তা কি ৭ দিনে শেখা সম্ভব? সহজ উত্তর হচ্ছে অবশ্যই, না। ফ্রিল্যান্স বা অনলাইন ক্যারিয়ার করা এত সহজ না, এবং এখানে যথেষ্ট দক্ষতা, পরিশ্রম, এবং চর্চার ব্যাপার আছে। ৭ দিনে হয়ত বেসিক ধারনা অর্জন করা সম্ভব, তবে সফল হতে হলে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে চর্চা করা লাগতে পারে।

অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রেও ফ্রিল্যান্সিং শিখা মূল কথা না। মূল কথা হচ্ছে একটা বিষয়ে দক্ষতা অর্জন এবং ঐ দক্ষতা কাজে লাগানো। “৭ দিনে ফ্রিল্যান্সিং শিখুন” বা “৭ দিনে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা প্রোগ্রামিং শিখুন” এমন দেখলে মনে হয় সবার অনেক তাড়া। আসলেই তাই, আমরা সব কিছু দ্রুত শিখতে চাই, যত সহজে পারা যায় টাকা ইনকাম করতে চাই। আর প্রতারকেরা এই সুযোগটাই নেয়। আসলে কি কেউ এত অল্প সময়ে কোন কিছু কি শিখতে পারে?

গবেষকরা (Bloom (1985), Bryan & Harter (1899), Hayes (1989), Simmon & Chase (1973)) দেখিয়েছে যে, কোন নিদিষ্ট বিষয়ে এক্সপার্ট হতে গেলে প্রায় দশ বছর সময় লাগে। এই কথাটা একটা বিশাল রেঞ্জের ফিল্ডের জন্য সত্যি যেমন, দাবা খেলা, সঙ্গীতচর্চা, ছবি আঁকা, পিয়ানো বাজানো, সাঁতার, টেনিস, ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি ইত্যাদি।

সত্যি কথা হাচ্ছে, কোথাও কোন সহজ শর্টকাট নেই। এমনকি মোজার্ট, যাকে মাত্র ৪ বছর বয়সেই মিউজিকাল জিনিয়াস ভাবা হতো, তারও আরো ১৩ বছর লেগেছে, তার প্রথম বিশ্বমানের সঙ্গীত রচনা করতে।তাই আমাদের যাদের অনেক তাড়া, দ্রুত ফ্রিলান্সিং করতে চাই, তাদের বলব কিছু শুরু করার আগে একটু ভাবি।

আমার কি করা উচিত? আমার হাতে কি যথেষ্ঠ সময় আছে? আমি কি যথেষ্ট সময় দিতে পারবো? এসব প্রশ্নের উত্তর গুলোর উত্তর, না হলে, এক সময় আমরা শেখার পরিবর্তে, হতাশ হয়ে পড়ব। ফ্রিলান্সিংএ ভালো করতে চাইলে যথেষ্ট সময় নিয়ে শুরু করা উচিত।

ফ্রিল্যান্সিং গাইড লাইন

এবার সেই গাইড লাইনঃ

আমার মতে ফ্রিলান্সিং এ সব সেক্টরেরই ফিউচারই কম বেশি ভাল। আপনার যে কাজ ভাল লাগে, সেই কাজই শিখবেন। তবে কথা হচ্ছে ফ্রিলান্সিংকে পার্টটাইম নয় ফুল টাইম হিসেবে নিতে হবে। টাকার লোভ যদি আগেই পেয়ে বসে, তবে ফ্রিলান্সিং আপনার জন্য না।

এই পর্যন্ত আমার লেখা পড়ে নতুন যারা ফ্রিলান্সিং এ আসতে চাচ্ছেন, তারা অনেকেই হয়ত হতাশ হয়ে পড়বেন। অনেকেই হয়ত মনে করছেন, আমি মনে হয় ১০ বছর ধরে কোন কিছু শেখার কথা বলছি। আসলে তা নয়। ফ্রিলান্সিং শুরু করার জন্য, নিদিষ্ট কোন কিছু শিখতে, এত সময় লাগে না। ক্ষেত্র বিশেষে ৬ মাস থেকে শুরু করে ২ বছরই যথেষ্ট। প্রথমে ফ্রিল্যন্সিং এর ব্যাপারে জানতে, প্রচুর নেট ঘাঁটা ঘাটি করুন, বিভিন্ন বিষয়ের উপর, কিছু টিউটোরিয়াল সংগ্রহ করে সেগুলো দেখুন।

আরও জানতে অভিজ্ঞ কারো হেল্প নিন। তবে সিদ্ধান্ত আপনাকেই নিতে হবে। আপনার মনে যেটা ভাল লাগে, সেটাকেই ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য ঠিক করুন। মনে রাখবেন বিষয় সিলেক্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার যা ভাল লাগে না, তা ভুলেও জোর করে ভাল লাগাতে যাবেন না। অযথা আপনার সময় নষ্ট হবে।

বিষয় সিলেক্ট করা হয়ে গেলে, এরপর কাজ শেখা শুরু করে দিন। মিনিমাম ১ বছর সময় নিয়ে ভাল করে কাজ শিখেন। যে কোন বিদ্যাই গুরু মুখী। তাই ভাল হয় অভিজ্ঞ কারও সাথে থেকে শিখতে পারলে। কারন আপনি গুগল করে ১ বছরে যা শিখবেন, সেটা ৩ মাসেই অভিজ্ঞ লোকের কাছ থেকে শিখতে পারবেন। এটা আমার ব্যাক্তিগত মত। এতে আপনার অনেক সময় বাঁচবে। এর পর ৬ মাস ইন্টার্নশিপ করবেন। মানে ফ্রী কাজ করে দিবেন প্রফেশনালি।

পাশাপাশি মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল খুলে বিড করা শুরু করবেন। কাজ পেতে একটু দেরি হতে পারে, আবার দ্রুত পেতেও পারেন। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে (কচ্ছপের মত)। একবার কাজ পাওয়া শুরু হয়ে গেলে, এর পরে আর পিছনে ফিরে তাকানো লাগবে না। আশা করা যায়, বাকি জীবন এটা দিয়েই করে খেতে পারবেন।

যদি কোন গুরু বা মেন্টরকে না পাই?

প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, শেখার জন্য যদি অভিজ্ঞ কাউকে না পাই? তাহলে বলব ভাল কোন ট্রনিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারেন। এখন অনেক ভাল ভাল ট্রেনিং সেন্টার আছে। এর পরেও আপনার আশপাশে যদি ভাল কোন ট্রেনিং সেন্টার না থাকে তবে কি করবেন? হাল ছেড়ে দেবেন? প্রশ্নই আসে না। ই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় স্কুলের নাম ইন্টারনেট। সেই স্কুলে দুজন শিক্ষক আছেন। একজনের নাম গুগল আরেকজনের নাম ইউটিউব।

দুজনেই খুবই ভাল শিক্ষক। যাদের কোন গুরু বা মেন্টর নেই বা ট্রেনিং সেন্টার নেই তাদের এই গুগলই বেষ্ট। যদিও অনেক সময় লেগে যাবে কিন্তু তার পরেও সফল হবেন। একজন যোগ্য গুরু পেলে হয়ত আরও দ্রুত সব কিছু করা সম্ভব। তবে এই দুই শিক্ষকের শুধু একটিই সমস্যা। তারা নিজে এসে কখনও আপনাকে শেখাবে না। একমাত্র আপনার ইচ্ছে থাকলেই তারা আপনাকে শেখাবে। যদি এই শিক্ষকদ্বয়ের কাছে কিছু শিখতে পারেন, তাহলে নিশ্চিত থাকুন, ওই শিক্ষাটাই আপনার জীবনের সেরা শিক্ষা হবে।

পরিশিষ্টঃ

সব শেষে একটা কথাই বলব, সেটা হচ্ছে, কেউ যদি কোন কিছু মন থেকে পেতে চায়, তবে কোন বাঁধাই আসলে বাঁধা না। সৃষ্টিকর্তা তাকে সাহায্য করেন। তার কাজ সহজ করে দেন। তাই আপনি যদি আসলেই মন থেকে ফ্রিলান্সিং করতে চান, কেউ আপনাকে থামাতে পারবে না, কোন বাঁধাই আসলে বাঁধা না। যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে, তাহলে হবেই হবে দেখা, সেই বিজয়ে!

Add Comment