প্রায়সই আমরা “IELTS” এর কথা শুনে থাকি। কিন্তু IELTS সম্পর্কে অনেক ইচ্ছুক মানুষের কোনো পরিস্কার ধারণা নেই। কি এই আইএলটিএস (IELTS), IELTS এর সুবিধা কি, ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টে।
IELTS কি?
ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় আইএলটিএস, হলো বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের পরীক্ষা। একজন ব্যক্তির ইংরেজি বিষয়ে কি ধরনের কার্যকরী দক্ষতা আছে, তা মূল্যায়ন করতে এই পরীক্ষাটি তৈরী করা হয়েছিলো। রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং, স্পিকিং – এইসব বিষয়ের ভিত্তিতে এই পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়।
যেসব স্থানে অধিকাংশ মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন, সেসব স্থানে একজন নন-ইংলিশ স্পিকার ব্যক্তি কতটুকু মানিয়ে নিতে পারেন তার মানদন্ড এই IELTS পরীক্ষা। উল্লেখিত পরিবেশে লেখাপড়া, কাজ কিংবা বাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ইংরেজি ভাষাকে যাচাই করে এই পরীক্ষা। বিশ্বের যেকোনো অফিসিয়াল টেস্ট সেন্টারে এই পরীক্ষা দেওয়া যাবে।
IELTS কেনো করবেন
IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার প্রধান কারণ হলো কাজ, পড়াশোনা বা বাস করার জন্য বিদেশগমন। বিশ্বের ১৪০টির অধিক দেশের ১১হাজারের অধিক সংগঠন দ্বারা স্বীকৃত এই ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই ব্যবস্থা। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই এই ধরনের ৩হাজার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিশ্বের যেসব দেশের প্রধান ও প্রচলিত ভাষা ইংরেজি, সেসব দেশে চাকরি বা পড়ালেখার জন্য যাওয়ার আগে IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। এসব দেশে আপনি ইংরেজি ভাষাভাষী পরিবেশে ইংরেজিতে কতটুকু দক্ষ, তা নির্ণয়ের কাজটি করে আইএলটিএস পরীক্ষা।
IELTS টেস্ট ফরম্যাট
আইএলটিএস সম্পর্কে সাধারণ ধারণা তো পেয়ে গেলেন। এবার জানি চলুন IELTS পরীক্ষা কিভাবে ও কি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে।
আইএলটিএস পরীক্ষা হয়ে থাকে সাধারণ বা একাডেমিক মডিউলে। উভয় মডিউলের ক্ষেত্রে মোট চারটি বিষয়, যথাঃ লিসেনিং, রাইটিং, রিডিং ও স্পিকিংয়ে দক্ষতা যাচাই করা হয়। লিসেনিং, রিডিং ও রাইটিং পরীক্ষা একইদিনে হয়ে থাকে। অন্যদিকে স্পিকিং পরীক্ষা প্রদত্ত যেকোনো একটি দিনে হয়ে থাকে। অর্থাৎ আইএলটিএস পরীক্ষায় দুই দিন অংশগ্রহণ করতে হবে। এই পরীক্ষার জন্য মোট প্রদত্ত সময় ২ঘন্টা ৪৫মিনিট।
Writing
রাইটিং বা লেখার উপর পরীক্ষার সময়সীমা ৬০মিনিট। এক ঘন্টার এই পরীক্ষায় আপনার ইংরেজি লেখার দক্ষতা পরীক্ষা করা হবে। রাইটিং এর ক্ষেত্রে দুইটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, যেখানে প্রথমটিতে কোনো চার্ট, ফ্লো, ডায়াগ্রাম, ম্যাপ বা গ্রাফে থাকা তথ্য ইংরেজিতে বিশ্লেষণ করতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নে একটি মতামত দেওয়া থাকবে যার পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে হবে ইংরেজিতে। উল্লেখ্য যে দ্বিতীয় প্রশ্নের মার্ক অধিক হয়ে থাকে।
প্রথমে প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে ১৫০শব্দের মধ্যে। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫০শব্দ লিখতে হবে। উল্লেখিত শব্দ সংখ্যার চেয়ে বেশি শব্দ ব্যবহার করা যাবে, কিন্ত কোনো অবস্থাতে কম শব্দ থাকলে হবেনা। দ্বিতীয় প্রশ্ন সাধারণ ও একাডেমিক, উভয় মডিউলে একই হলেও প্রথম প্রশ্নের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণ মডিউলে প্রথম প্রশ্নে কোনো ফরমাল বা পারসোনাল লেটার লিখতে হয়।
Speaking
আপনার ইংরেজী বলার দক্ষতা পরীক্ষা হবে স্পিকিং টেস্ট এর মাধ্যমে। মাত্র ১০-১৫মিনিটের এই পরীক্ষায় আপনি কতটা গুছিয়ে ও সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন তার পরীক্ষা নেওয়া হয়। আইএলটিএস পরীক্ষার এই অংশে একজন ট্রেইনার আপনার সাথে কথা বলবেন। তিনি আপনার কাছে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয় জানতে চাইবেন, যেমনঃ আপনি কোথায় থাকেন, আপনার শহর সম্পর্কে বর্ণনা, আপনার প্রিয় রঙ কি ও কেনো, ইত্যাদি।
খুব সাধারণ এসব প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতে গুছিয়ে বলতে পারলে এই পরীক্ষায় পাস করা যাবে। এইতো গেলো স্পিকিং টেস্টের প্রথম অংশ। স্পিকিং এর দ্বিতীয় অংশে আপনাকে নির্দিষ্ট যেকোনো একটি বিষয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে বলা হবে। সবশেষে প্রদত্ত বিষয়ের উপর কিছু প্রশ্ন করা হবে।
👉গুগল ডকস কি? Google Docs ব্যবহারের নিয়ম ও সুবিধা জানুন
Listening
লিসেনিং পরীক্ষার মোট সময়সীমা ৩০মিনিট। এই সময়ের মধ্যে আপনাকে ৪টি রেকর্ড শোনানো হবে, যা থেকে কিছু প্রশ্ন করা হবে এবং প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে উত্তরপত্রে। উল্লেখ্য যে একটি রেকর্ড শুধুমাত্র একবার শোনানো হবে। সুতরাং সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে না শুনলে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন হয়ে যাবে।
Reading
রিডিং টেস্ট এর ক্ষেত্রে কোনো বিষয় পড়ে সে সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা অর্জনের ক্ষমতা যাচাই করা হয়। রিডিং টেস্ট এর ক্ষেত্রে মোট ৪০টি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করতে হয় ৬০মিনিট সময়ের মধ্যে। রিডিং টেস্টে সাধারণ ও একাডেমিক মডিউলের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।
একাডেমিক মডিউলের ক্ষেত্রে জার্নাল, ম্যাগাজিন, বই বা পত্রিকা হতে তিনটি লম্বা আর্টিকেল দেওয়া হবে যা থেকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। এই আর্টিকেল হবে গবেষণা নির্ভর বা বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো লেখা। অন্যদিকে সাধারণ মডিউলের ক্ষেত্রে ম্যাগাজিন, পত্রিকা, বিজ্ঞাপন, হ্যান্ডআউট বা বই থেকে লেখা তুলে দেওয়া হলেও তা একাডেমিক থেকে অপেক্ষাকৃত সহজ রাখা হয়।
👉 ছাত্রজীবনে আয় করার সেরা কিছু উপায়
আইএলটিএস গ্রেডিং সিস্টেম
আইএলটিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে পাশের নির্দিষ্ট কোনো নম্বর নেই। নাম্বারের পরিবর্তে এখানে স্কোর প্রদান করা হয়। প্রদত্ত টেস্টের উপর ভিত্তি করে ১-৯ এর মধ্যে একটি স্কোর পেয়ে থাকেন অংশগ্রহণকারীগণ। চারটি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নাম্বারের গড়কে ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর বলা হয়। এই স্কোর ৬ বা তার উপরে হলে সেটিকে ভালো ব্যান্ড স্কোর বলে গণ্য করা হয়।
আইএলটিএস প্রস্তুতি
চাইলে কিন্তু আইএলটিএস এর জন্য ঘরে বসে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কোচিং সেন্টারগুলোতে মূলত বাড়তি কিছু কৌশল শিখিয়ে দেয়, বাকি প্রস্তুতি নিজ থেকেই নিতে হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেকেউ কোচিং করা ছাড়াও আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি যাচাই করতে মক টেস্ট দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ইউটিউব ও অন্যান্য ওয়েবসাইটের সাহায্য নিয়ে আইএলটিএস এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব।
IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহণ
আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা কিন্তু বেশ সহজ। আইডিপি (IDP) কিংবা ব্রিট্রিশ কাউন্সিলের অধীনে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে। বাংলাদেশে টাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের টেস্ট সেন্টার রয়েছে যেখানে যোগাযোগ করে IELTS পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে। সরাসরি টেস্ট সেন্টারে গিয়ে কিংবা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।