ব্যক্তিগত প্রোফাইল এর জন্য ফেসবুক প্রফেশনাল মোড ফিচার চালু করেছে ফেসবুক। পরীক্ষামূলক এই ফিচারের মাধ্যমে যোগ্য ক্রিয়েটরগণ ফেসবুক পেজ তৈরী করা ছাড়াই ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এটি মূলত ক্রিয়েটরদের জন্য ফেসবুক এর প্যারেন্ট কোম্পানি মেটা এর ১বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট এর অংশ।
ফেসবুকের পাশাপাশি ইন্সটাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সারগণ ও এই বোনাস পেতে যাচ্ছেন।
চলুন জেনে নেওয়া যাক নতুন এই ফেসবুক প্রফেশনাল মোড কি এবং প্রোফাইলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের বোনাস দেওয়া নিয়ে মেটা’র পরিকল্পনা সম্পর্কে।
ফেসবুক প্রফেশনাল মোড কি?
ফেসবুক প্রোফাইলের নতুন সংযোজন হলো প্রফেশনাল মোড। মূলত এই প্রফেশনাল মোড ব্যবহার করে কোনো আলাদা ফেসবুক পেজ তৈরি করা ছাড়া নিজেদের ফেসবুক একাউন্ট অর্থাৎ ব্যক্তিগত প্রোফাইল মনিটাইজ করে অর্থ আয় করা যাবে। ক্রিয়েটরদের জন্য গঠন করা আলাদা ফান্ড দ্বারা প্রফেশনাল মোডের ক্রিয়েটরদের জন্য বোনাস দেয়া হবে।
ফেসবুক প্রফেশনাল মোড চালু করলে প্রোফাইলের কোন পোস্ট কতজন মানুষ দেখল, কোন ধরনের পোস্টে এনগেজমেন্ট বেশি হচ্ছে এসব তথ্য একটি আলাদা ড্যাশবোর্ডে দেখতে পাবেন। ফেসবুক পেজে যেভাবে বিভিন্ন অ্যানালিটিক্স ডেটা পাওয়া যায়, প্রফেশনাল প্রোফাইলেও সে ধরনের তথ্য পাবেন।
কিভাবে কাজ করে ফেসবুক প্রফেশনাল মোড?
প্রফেশনাল মোড হলো ফেসবুক প্রোফাইলের জন্য নতুন একটি ফিচার। ক্রিয়েটরদের গুরুত্ব্ব প্রদান করে আয়ের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ইনসাইটস (Insights) প্রদান করা হলো ফেসবুক প্রোফাইলের প্রফেশনাল মোড ফিচারটির লক্ষ্য। নিজের কমিউনিটিকে ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এসব তথ্য। প্রফেশনাল মোড এর মাধ্যমে যোগ্য ক্রিয়েটরগণ রেভিনিউ পেতে পারেন ও তাদের অডিয়েন্স বড় করতে শক্তিশালী টুলসমূহ ব্যবহার করতে পারবেন।
ফেসবুক প্রোফাইলের জন্য প্রফেশনাল মোডের মাধ্যমে আয়ের একটি প্রধান উৎস হলো রিলস প্লে (Reels Play) বোনাস প্রোগ্রাম। রিলস হলো ছোট ছোট ভিডিও, যা অনেকটা টিকটকের ভিডিওগুলোর মত। টিকটকের মার্কেট ধরার জন্য ফেসবুক রিলস ফিচারটি চালু করে। এখন ব্যবহারকারীদের রিলস বানাতে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে রিলস বানানোর জন্য বোনাস ঘোষণা করেছে ফেসবুক।
রিলস প্লে বোনাস প্রোগ্রামের আওতাধীন ক্রিয়েটরগণ তাদের মাসিক ভিউ এর উপর নির্ভর করে প্রায় ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। রিলস ফিচারটি এখনো সকল দেশে নেই। যার ফলে ফেসবুক প্রোফাইলের জন্য প্রফেশনাল মোড ফিচারটি চলে আসলেও রিলস প্লে প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আয়ের পথ তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে।
প্রফেশনাল মোড এর লক্ষ্য
মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ এই সপ্তাহে ২০২২ নাগাদ ক্রিয়েটরদের পেছনে ১বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইনভেস্ট করার কথা জানান। এই ইনভেস্টমেন্টের অংশ হবে বিভিন্ন ফান্ড প্রোগ্রামসমূহ, ক্রিয়েটর ফান্ড ও অন্যান্য মনিটাইজেশন প্রোগ্রামসমূহ। মূলত নিজেদের প্ল্যাটফর্মে ক্রিয়েটরদের জায়গা করে দিয়ে প্রতিযোগিতা আরো সংকীর্ণ করতে চায় ফেসবুক।
ফেসবুক অসংখ্য ক্রিয়েটর থাকলেও এতোদিন ধরে ক্রিয়েটরদের জন্য বোনাস দেয়ার মত বাড়তি কিছু করেনি ফেসবুক। সেক্ষেত্রে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মসমূহ বেশ এগিয়ে আছে। ইন্সটাগ্রামে ইনফ্লুয়েন্সার কমিউনিউটি থাকলেও প্রতিযোগিতার কারণে এই মার্কেটে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। এমনকি ইন্সটাগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা নিজেই এই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেট নিয়ে নেতিবাচক অভিব্যাক্তি প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি একটি এলগরিদমিক ফিড ব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে ইন্সটাগ্রামে, যার ফলে ব্র্যান্ড ও ব্যবসার পোস্টের চেয়ে পরিবার ও বন্ধুদের পোস্ট অধিক দেখতে পাবেন ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীগণ। ইন্সটাগ্রামের এই হঠাৎ পরিবর্তন নিয়েও অনেকে ক্ষুদ্ধ।
ইউটিউব এক যুগের অধিক সময় ধরে ক্রিয়েটরদের কনটেন্ট মনিটাইজেশনের মাধ্যমে অর্থ শেয়ার করে আসছে। এছাড়া কিছুদিন আগে ইউটিউবের শর্ট ভিডিও ফিচার ইউটিউব শর্ট ক্রিয়েটরদের বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তবে ইন্সটাগ্রামে রেভিনিউ জেনারেট করার ফিচার যুক্ত হয় মাত্র গত বছর। এসব সমস্যার পাশাপাশি কোম্পানি হিসেবে ফেসবুকের নামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কেলেংকারি বিবেচনায় ফেসবুক একটি অস্বস্তিকর অবস্থায় আছে।
ক্রিয়েটরগণ হলেন প্ল্যাটফর্মের মূল প্রাণ, এই বিষয়টি অবশেষে উপলব্ধি করেছে ফেসবুক। অবশেষে ফেসবুক পেজের পাশাপাশি ফেসবুক প্রোফাইল এর প্রফেশনাল মোড এর সাহায্যে বোনাস পাবেন ক্রিয়েটরগণ। মূলত অনেকটা রেভিনিউ শেয়ারিং এর মতো করে বোনাস প্রদান করে ক্রিয়েটরদের প্ল্যাটফর্মটির দিকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্য ফেসবুকের।
ফেসবুক পেজ ও প্রফেশনাল প্রোফাইলের মধ্যে পার্থক্য কি?
ফেসবুক পেজ কিভাবে কাজ করে তা কমবেশি সবার জানা। ফেসবুক পেজ সাধারণ প্রোফাইল থেকে আলাদা হয়ে থাকে। একটি ফেসবুক প্রোফাইল ব্যবহার করে একাধিক পেজ খোলা সম্ভব। তবে অনেকে তাদের প্রোফাইলকেই পেজ হিসাবে ব্যবহার করতে চান। এই সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে প্রোফাইলের জন্য প্রফেশনাল মোড।
প্রোফাইল এর জন্য প্রফেশনাল মোড ব্যবহার করে সাধারণভাবে পোস্ট করার পাশাপাশি পেজের মত এডভান্সড পোস্ট ফিচার এবং অডিয়েন্স ও প্রোফাইল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। মূলত ফেসবুক পেজের সকল ফিচার যুক্ত হতে যাচ্ছে ফেসবুক প্রফেশনাল প্রোফাইলে। যেমন, কোনো পোস্টে মোট রিয়েকশন, কমেন্ট ও শেয়ার এর পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে ফলোয়ার এর গ্রোথ ও রিভিউ করা যাবে।
অর্থাৎ পেজ এবং প্রফেশনাল প্রোফাইল এর মধ্যে বলতে গেলে তেমন কোনো পার্থক্য চোখে পড়বেনা। ফেসবুক প্রোফাইলের জন্য প্রফেশনাল মোড অন করার পর যে কেউ উক্ত প্রোফাইল ফলো করতে পারবে ও তাদের ফিডে পাবলিক কনটেন্টসমুহ দেখতে পাবে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রোফাইলের জন্য প্রফেশনাল মোড অন করার পরও ঠিক আগের মত পোস্টের প্রাইভেসি পাবলিক বা প্রাইভেট রাখা যাবে। যেখানে ফেসবুক পেজ থেকে কোনো পোস্ট প্রাইভেট রাখা সম্ভব না।
👉 সোশ্যাল মিডিয়া থেকে টাকা আয়ের উপায়
অর্থাৎ একজন ব্যক্তির নামে আলাদা করে প্রোফাইল বা পেজ পরিচালনার দরকার পড়বেনা। ব্যক্তিগত পোস্ট বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা যাবে ও সকল ফলোয়ারদের জন্য পাবলিক পোস্ট করা যাবে। এর মানে প্রফেশনাল মোড চালু করার পরও কনটেন্টের প্রাইভেসির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারকারীর হাতে থাকবে।
বর্তমানে এই নতুন মোড শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের গুটিকয়েক ফেসবুক প্রোফাইলে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। ফেসবুক এর ভাষ্যমতে ইতিমধ্যে চালানো এই পরীক্ষার ফল বেশ আশানুরূপ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সকল ফেসবুক ব্যবহারকারীর জন্য ফেসবুক প্রফেশনাল মোড ফিচারটি চালু করবে মেটা।
পেজের পরিবর্তে কেনো প্রফেশনাল মোড চালাবো?
ফেসবুক পেজ ব্যবহার না করে প্রফেশনাল মোড ব্যবহার কেনো করবো – এমন প্রশ্ন করতে পারে অনেকেই। তবে এর উত্তর খুবই সহজ। চলুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।
ধরুন, আপনি একজন গায়ক ও আপনার একটি ফেসবুক একাউন্ট রয়েছে। আপনি হয়ত আপনার প্রোফাইলে আপডেট শেয়ার করেন, কিন্তু একই আপডেট আবার আপনার ফেসবুক পেজেও শেয়ার করতে হয়। অর্থাৎ একই পোস্ট আপনাকে দুইবার করতে হচ্ছে। আবার আপনার বন্ধুরা আপনার পেজ ফলো করলে সেক্ষেত্রে একই পোস্ট দুইবার দেখবে। এমন অবস্থায় আপনি যদি ফেসবুক পেজের প্রফেশনাল মোড ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে বন্ধুদের সাথে কমিউনিউকেট এর পাশাপাশি একই ছাদের নিচেই ফ্যানদের সাথে আপডেট শেয়ার করা যাবে।
মূল কথা হলো কনটেন্ট তৈরির পেছনে সবাইকে আগ্রহী করতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মেটা, তথা ফেসবুক। আর প্রফেশনাল প্রোফাইল মোড ব্যবহারের ফলে আলাদা পেজ পরিচালনার ঝামেলা থেকে মুক্তিও পাওয়া যাবে।
টিকটক এর মতো শক্তিশালী ক্রিয়েটর কমিনিউটি আছে এমন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে বেশ পিছিয়ে পড়েছে ফেসবুক। ৩বিলিয়ন এর অধিক ডাউনলোড ও ফেসবুকের চেয়ে অধিক এনগেজমেন্ট নিয়ে টিকটক বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। আর ক্রিয়েটরদের তাদের শ্রমের মূল্য প্রদান করে ফেসবুকের দিকে আকৃষ্ট করার প্রচেষ্টায় আছে ফেসবুক।
ফেসবুক প্রফেশনাল মোড থেকে আয়ের পরিমাণ কেমন হবে?
প্রোফাইলের জন্য এই প্রফেশনাল মোড এর মাধ্যমে কি ধরনের আয় সম্ভব, এটি নিয়ে অনেকের মনে শঙ্কা থাকতে পারে। ফেসবুক জানিয়েছে যোগ্য ক্রিয়েটরগণ তাদের সিলেক্টেড রিলসের মাসিক ভিউস এর উপর নির্ভর করে মাসিক সর্বোচ্চ ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। এটি প্রফেশনাল মোডের আয়ের প্রধান উৎস হতে চলেছে। তবে এই “Reels Play” প্রোগ্রামে অংশগ্রণ করতে ফেসবুকের তরফ থেকে ইনভাইট পেতে হবে।
No Responses