৫৩ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য ফাঁস: আপনার তথ্য ঠিক আছে?

ফেসবুকে আপনার ব্যক্তিগত গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে কিনা একটি টুল ব্যবহার করে তা আপনি এখন যাচাই করতে পারবেন। সারা বিশ্বের ৫৩ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর পরিচয়, ব্যক্তিগত তথ্য এবং ফোন নাম্বার ফাঁস হয়েছে যা হ্যাকারদের কাছে সুপরিচিত একটি অনলাইন ডেটাবেজ-এ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩৮ লক্ষেরও বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য রয়েছে

ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই ওয়েবসাইট: Have I Been Pwned থেকে এখন জেনে নিতে পারবেন তাদের ইমেইল ঠিকানা এবং মোবাইল ফোন নাম্বারও ফাঁস হয়েছে কিনা।

অবশ্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, তথ্য ফাঁসের ঘটনাটি পুরোন এবং এটি ঘটেছে ২০১৯ সালে।

তবে বিভিন্ন দেশের সরকার এখন এ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। ব্লিপিংকম্পিউটারডটকম নামে একটি সাইটে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে এক রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সালের জুন মাস থেকে হ্যাকারদের একটি ফোরামে এসব তথ্য প্রকাশ হতে শুরু করে। ফোরাম সদস্যদের মধ্যে এই ডেটাবেজ বেচাকেনা শুরু হয়।

ফাঁস হওয়া ডেটাবেজে রয়েছে ব্যবহারকারীর ফেসবুক আইডি, মোবাইল ফোন নাম্বার, ইমেইল ঠিকানা, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, অবস্থানের ঠিকানা, পেশা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য।

ফেসবুক বলছে, বছর দেড়েক আগেই নিরাপত্তার ফাঁকফোকরগুলো বন্ধ করা হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণকারীরা জানাচ্ছেন, এই ডেটাবেজ-এ ১০৬টি দেশের ৫৩ কোটি মানুষের তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে এক কোটি ১০ লক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য ব্রিটেন থেকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন কোটি এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ৭০ লক্ষ মানুষের তথ্য ফাঁস করে দেয়া হয়েছে।

ফাঁস হওয়া তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৪ নম্বরে। বাংলাদেশের মোট ৩৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৩৯ জনের তথ্য রয়েছে।

HaveIBeenPwned-এর একজন পরিচালক ট্রয় হান্ট বলছেন, সবার সব তথ্যই যে ফাঁস হয়েছে এমন না। তবে ৫০ কোটি লোকের ফোন নাম্বার ফাঁস হয়েছে। “সামান্য কিছু লোকের ইমেইল ঠিকানাও চুরি হয়েছে” বলে তিনি তার ওয়েবসাইটের একটি ব্লগে জানিয়েছেন।

ফেসবুকের তথ্য ফাঁস হয়েছে এমন খবর প্রচারিত হওয়ার পর তার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বেড়ে যাওয়ার পটভূমিতে মি. হান্ট সাইটে ফোন নাম্বার সার্চ ফাংশনটি যুক্ত করেন।

এর আগে মানুষ তাদের ইমেইল হ্যাক হয়েছে কিনা তা জানতে এই সাইটটি ব্যবহার করতেন।

এখন এই সাইটে গেলে ইউজাররা জানতে পারবেন তাদের ফোন নাম্বার ফাঁস হয়েছে কিনা।

“আমি এখন নিশ্চিত হয়ে বলতে চাইছি যে স্বল্প সংখ্যক নয়, এখন আমরা বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো।”

মার্ক জাকারবার্গের ফোন নাম্বারও ফাঁস হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।জানা যাচ্ছে যে ফেসবুকের ডেটাবেজ থেকে যাদের তথ্য ফাঁস হয়েছে তার মধ্যে এর প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের মোবাইল ফোন নাম্বারও রয়েছে। এই স্ক্রিনশটটি থেকে জানা যাচ্ছে মি. জাকারবার্গ সিগনাল অ্যাপটিও ব্যবহার করেন, যার মালিকানা ফেসবুকের নয়।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিশ্লেষক ডেভ ওয়াকার মি. জাকারবার্গের ফোন নাম্বারের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে টুইট করেছেন, “সম্প্রতি ফেসবুক থেকে যে তথ্য ফাঁস হয়েছে তার মধ্যে তার (মি. জাকারবার্গের) এই নাম্বারটি রয়েছে।”

নিরাপত্তার যুক্তি দেখিয়ে ফেসবুক ২০১১ সালে থেকে তার ব্যবহারকারীদের ফোন নাম্বার ডেটাবেজে যুক্ত করতে বলেছে। এর মাধ্যমে তারা ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’-এর ব্যবস্থা করেছে।

কিন্তু তার ডেটাবেজ থেকে সর্ব সম্প্রতি তথ্য ফাঁসের ঘটনা সম্পর্কে ফেসবুক খুব একটা মুখ খুলছে না। তারা শুধু এটুকুই বলেছে যে ২০১৯ সালের অগাস্ট মাসেই সমস্যাটি দূর করা হয়েছে।

“এব্যাপারে ফেসবুকের অবস্থান কী হবে তা নিয়ে তারা কোন কথা বলছে না,” মি. হান্ট লিখছেন, “তারা বলার চেষ্টা করেছে ২০১৯ সালের ঘটনাটিই সমস্যার মূলে রয়েছে, কিন্তু ব্যবহারকারীদের যেসব তথ্য খোলাখুলিভাবে এখনও পাওয়া যাচ্ছে সে সম্পর্কে তারা বিস্তারিত কিছু বলছে না।”

এসব বিষয় সম্পর্কে বিবিসির তরফ থেকে কিছু প্রশ্ন পাঠানো হলেও ফেসবুক তার কোন জবাব দেয়নি।

ইতোমধ্যে, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা দেখভাল করে এমন বেশ কিছু দেশের কর্তৃপক্ষ ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।

Add Comment