ল্যাপটপে কাজের ব্যস্ততা আর ঠিক পাশেই মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপের টুং টাং আওয়াজ৷ একবার ল্যাপটপ, আরেকবার ফোন হাতে নিতে নিতে একসময় হয়ত বিরক্ত হয়ে বলেই বসলেন হোয়াটসঅ্যাপের সমস্যা কি! এটা ডেস্কটপে কেন ব্যবহার করা যায় না। আসলে শুরুতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ শুধুমাত্র ব্যবহারকারীর ফোনেই ব্যবহার করা যেত৷ কিন্তু ডেস্কটপ কম্পিউটারে এটি অপারেট করা সম্ভব ছিল না৷
তবে প্রোগ্রামারদের বদৌলতে হোয়াটসঅ্যাপ কম্পিউটারেও ব্যবহারের সেবা প্রদান শুরু করেছে যা সারা বিশ্বকে চমক লাগিয়ে দিয়েছে৷ অর্থাৎ আপনি আপনার কম্পিউটার থেকে আপনার বন্ধুদের মোবাইলফোনে মেসেজ পাঠাতে পারবেন এবং তাদের দেয়া মেসেজও গ্রহণ করতে পারবেন।
ডেস্কটপ থেকে সমস্ত কথোপকথন এবং বার্তা দেখতে পারবেন যেগুলো হয়ত চলছে আপনার অ্যান্ড্রয়েড, নোকিয়া, ব্ল্যাকবেরী কিংবা উইন্ডোজ সেটটিতে৷এই সেবাটি পেতে আপনার শুধুমাত্র ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশন, একটি ডেস্কটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হবে ৷ আপনি আপনার ডেস্কটপে পছন্দমত যেকোন ব্রাউজারের মাধ্যমে সেবাটি গ্রহণ করতে পারবেন৷
ব্রাউজারের মাধ্যমে কম্পিউটার কিংবা ডেস্কটপে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের জন্য এসেছে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব বা হোয়াটসঅ্যাপ ডেস্কটপ। এটি মূলত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টের কম্পিউটার ভিত্তিক এক্সটেনশন৷ আপনার মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটির হুবহু এবং প্রসারিত একটি প্রতিবম্ব দেখা যায় আপনার ডেস্কটপে৷ অর্থাৎ একটি ওয়েবসাইট মিরর এর মত কাজ করে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব৷
একই ভিজ্যুয়াল ইন্টারফেস সহ আপনার আলাপচারিতা একটি প্রসারিত প্লাটফর্মে প্রেজেন্ট করার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব একটি দুর্দান্ত উপায়৷ আপনার পাঠানো মেসেজ এবং গ্রহণ করা প্রতিটি মেসেজ আপনার ফোন এবং কম্পিউটার উভয় ডিভাইসেই সিনক্রোনাইজ হয়ে যায় এবং আপনি চাইলেই উভয় ডিভাইস থেকেই সেগুলো দেখতে পারবেন৷
তবে স্টোরেজ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই৷ কেননা আপনার অনুমতি ছাড়া মাল্টিমিডিয়া মেসেজগুলো ডিভাইসে একাই ডাউনলোড হয়ে যাবে না৷ সুতরাং আপনি আপনার পছন্দমতো ডেস্কটপে কিংবা মোবাইল ফোনে যেকোন মাল্টিমিডিয়া সংরক্ষণ করতে পারেন৷এন্ড টু এন্ড ইনক্রিপ্টেড এই প্লাটফর্মটিতে কিউআর কোড স্ক্যান ছাড়া লগইন করা যায় না।
পাসওয়ার্ড কিংবা ব্যবহারকারীর নাম দেয়ার প্রয়োজন হয় না বলে এখানে হ্যাকিংয়েরও ভয় নেই৷ তাই হোয়াটসঅ্যাপ ডেস্কটপকে আপনার মেসেজিং এর জন্য অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি প্লাটফর্ম বলা চলে৷
ডেস্কটপে হোয়াটসঅ্যাপ যেভাবে ব্যবহার করবেন
মাত্র তিনটি ধাপেই আপনি হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবের মত চমৎকার এই সেবাটি গ্রহণ করতে পারেন৷ ধাপগুলো আলোচনা করা হলো –
ধাপ ১: নির্বাচিত ব্রাউজারের সাহায্যে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ওয়েবসাইটে নেভিগেশন
হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ব্যবহার করতে নির্দিষ্ট কোন অপারেটিং সিস্টেমের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবের কোন সফটওয়্যার ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয় না৷ এর পরিবর্তে সাফারি, গুগল ক্রোম, মাইক্রোসফট এজ, অপেরা বা মজিলা ফায়ারফক্স সহ অন্য যেকোন ব্রাউজারের মাধ্যমে সরাসরি অ্যাক্সেস করা যায় ।
আপনার কাঙ্খিত ব্রাউজার থেকে ‘হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ‘বা ( web.whatsapp.com) লিখে সার্চ করুন৷ তাহলে আপনি হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবের ওয়েবসাইটটি পেয়ে যাবেন৷ এখানে একটি কিউআর কোড প্রদর্শিত হতে দেখতে পাবেন৷ আপনার ফোনটি হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবে সংযুক্ত করতে এই কোডটি আপনার পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে৷
ধাপ ২: হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব নির্বাচন
হোয়াটসঅ্যাপ মোবাইল অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন এবং আইফোন উভয়ের জন্যই কার্যকরী৷
আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করুন৷ ছবিতে প্রদর্শিত স্থানে অর্থাৎ উপরের দিকে ডানে যেখানে তিনটি বিন্দু দেখা যাচ্ছে, সেই সেটিংস গিয়ার আইকনটিতে ক্লিক করুন৷ সেখানে গিয়ে পপ-আপ হওয়া মেনু থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবে (whatsapp web) এ ক্লিক করুন।
আপনাকে আপনার ফোনের ক্যামেরায় হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাক্সেসের অনুমতির জন্য বলা যেতে পারে৷ অনুমতি দিতে অ্যালাউ (allow) লেখাটির উপর ক্লিক করুন৷ এ পর্যায়ে আপনার ফোনের স্ক্রিনটি তাহলে কিউআর কোড স্ক্যানারের মত হবে৷
আইফোনের ক্ষেত্রে সেটিংস অপশনে গিয়ে নিচে বাম পাশের হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব অথবা ডেস্কটপে ক্লিক করুন।
ধাপ৩: কিউআর কোড স্ক্যানের মাধ্যমে ফোনকে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবে সংযুক্ত
এরপর আপনার স্মার্টফোনে ক্যামেরা অন হয়ে যাবে যার সাহায্যে আপনাকে ডেস্কটপে প্রদর্শিত কিউআর কোডটি স্ক্যান করতে হবে । এখন হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ওয়েবসাইটটি দেখতে আপনার ল্যাপটপে ফিরে যান৷ ডেস্কটপের স্ক্রিনে প্রদর্শিত কিউআর কোড স্ক্যান করতে দেরি হলে পুরনো কোড আনএভেইলেবল দেখাতে পারে।
সেক্ষেত্রে আপনার ফোনে স্ক্যানারের জন্য একটি কিউআর কোড পুনরায় পেতে আপনাকে রিলোড কিউআর কোডে ক্লিক করতে হবে৷ যদি আপনি প্রায়শই কোন নির্দিষ্ট ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন তাহলে কিপ মি সাইনড-ইন(keep me signed in) এর পাশের বক্সটিতে টিক চিহ্ন দিন৷কারণ হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট পর্যন্ত আপনার ডেস্কটপ ডিভাইসটিতে লগড ইন থাকবে৷
আপনি যদি ব্যবহার না করেন তবে অটোমেটিক লগ-আউট হয়ে যাবে৷ তাই লগ-ইন এবং লগ-আউটের ঝামেলা দূর করতে কিপ মি সাইন্ড ইন এ ক্লিক করুন৷ কোডটি স্ক্যান করতে এখন আপনার ফোনের কিউআর কোড স্ক্যানারকে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব কিউআর কোডের দিকে নির্দেশ করুন। স্ক্যানিং সফলভাবে শেষ হয়ে গেলেই আপনি ডেস্কটপে হোয়াটসঅ্যাপ- এর মেসেজগুলো দেখতে পাবেন এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এর সকল কার্যক্রম অপারেট করতে পারবেন৷
এই তিনটি সহজ ধাপ পর্যায়ক্রমে শেষ করলে আপনি এরুপ ডেস্কটপে ছবিতে প্রদর্শিত স্ক্রিনের মত একটি স্ক্রিনের দেখা পাবেন।
ল্যাপটপে কাজ করার সময় বারবার ফোন হাতে নেয়ার বিরক্তি থেকে মুক্তি দেয় হোয়াটসঅ্যাপ ডেস্কটপ বা হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব৷ তবে অন্যান্য সকল অ্যাপ্লিকেশনের মত হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবেরও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ ডেস্কটপে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের সময় আপনার ফোনের ডাটা কানেকশনের সাথে পিসির সংযোগ থাকা প্রয়োজন।
অর্থাৎ আপনি যদি আপনার মুঠোফোনের ডাটা কানেকশন বন্ধ করে দেন অথবা দুর্ভাগ্যক্রমে আপনার ফোনটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে পিসিতেও কোন বার্তা গ্রহণ করতে কিংবা বার্তা পাঠাতে পারবেন না। এর আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে এটি আপনাকে পিসিতে হোয়াটসঅ্যাপ কলগুলির উত্তর দিতে দেয় না৷ সেটা অডিও হোক কিংবা ভিডিও হোক, কলটি আপনি ফোন ছাড়া রিসিভ করতে পারবেন না৷
সেক্ষেত্রে ফোন আপনার থেকে দূরে থাকলে কল আসার সাথে সাথে যদি আপনি বুঝতে নাও পারেন হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব আপনাকে আপনার মিস করা কলটি অবশ্যই নোটিফাই করবে৷ এখন হয়তো আপনি ভেবে থাকতে পারেন যে তাহলে ডেস্কটপে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের ফায়দাটা কোথায়!
এমন কিছু মাল্টিমিডিয়া যেগুলো হয়তো অনেক বড় সাইজের ফাইল ধারণ করে সেগুলো আপনার ফোনে সাপোর্টেড না হলেও ডেস্কটপে আপনি খুব সহজেই ডাউনলোড করতে পারবেন কিংবা পাঠাতে পারবেন।এছাড়াও অনেক ধরনের ফাইল ফরম্যাট ফোনে সাপোর্টেড না হলেও ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে দেখা যায়৷
এর অন্যতম বড় সুবিধাটি হলো আপনি ডেস্কটপে প্রয়োজনীয় সকল ছবি, অডিও, ভিডিও এবং ফাইল সেইভ করে আপনার ফোনকে শর্ট স্টোরেজের হাত থেকে বাঁচাতে পারেন। কিংবা আপনার ফোন থেকে কোন ডাটা গায়েব হয়ে গেলে সেটা খুব সহজেই ডেস্কটপ থেকে পেয়ে যেতে পারেন৷ মোবাইল ফোনের তুলনায় ডেস্কটপে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার খুবই সহজ এবং দ্রুততার সাথে করা যায়। অর্থাৎ হোয়াটাসঅ্যাপ ওয়েব সেবাটি৷ আপনার গুরুত্বপূর্ণ মেসেজিংয়ের ক্ষেত্রে সময় সাশ্রয়ী একটি প্লাটফর্ম হিসেবেও গণ্য হতে পারে।
বর্তমান বিশ্বের ৭০০ মিলিয়নেরও বেশী ব্যবহারকারীর ফোনে জায়গা করে নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ্লিকেশনটি৷ বিশ্বব্যাপী ৩০ মিলিয়নেরও বেশী মেসেজ আদান প্রদান হয় এই মেসেজিং অ্যাপটির মাধ্যমে৷ সুতরাং হোয়াটসঅ্যাপের জনপ্রিয়তা কতখানি তা বলার অপেক্ষায় থাকে না৷
সরাসরি মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা এবং ছোট বড় আনলিমিটেড গ্রুপ তৈরি, গ্রুপ অডিও কল বা গ্রুপ ভিডিও কলের সুবিধা থাকায় তাৎক্ষণিক মিটিং বা ব্যবসায়িক আলাপ এর ক্ষেত্রে এটির ভুমিকা উল্লেখযোগ্য। আশা করছি, আমাদের আজকের লেখাটি আপনাদের কিছুটা হলেও নতুন কিছু জানাতে পেরেছে।