যদি প্রশ্ন করা হয় ভিডিও এডিটিং দিয়ে কী হবে, তাহলে তার সহজ উত্তর ভিডিও এডিটিং দিয়ে কী হবে না। উন্নত হচ্ছে প্রযুক্তি, উন্নত হচ্ছে বিশ্ব। আগে উচ্চ কনফিগারেশনের ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার ছাড়া ভিডিও এডিটিং করা না গেলেও বর্তমানের এন্ড্রয়েড ফোনগুলো দিয়ে ভিডিও তৈরী এবং এডিটিং করা যায় খুব সহজে৷ শুধুমাত্র মোবাইলে ব্যবহারের সুবিধার্থেই বের হয়েছে অনেক ভিডিও এডিটিং অ্যাপ্স যেগুলো গুগল প্লে স্টোর থেকে খুব কম খরচেই ডাউনলোড করে ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায়৷
আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন মোবাইল জার্নালিস্ট, ইউটিউব ক্রিয়েটর, ব্লগার কিংবা শর্ট ফিল্ম প্রোডিউসার তাহলে এই অ্যাপ্গুলো সম্পর্কে জানা আপনার জন্য খুবই জরুরি৷ তাছাড়া সহজলভ্য হওয়ায় সারাবিশ্বে আরো বিভিন্ন পেশার মানুষও এই অ্যাপ্গুলোকে প্রয়োজনানুসারে ব্যবহার করে আসছে৷
একটি ভিডিওকে আকর্ষণীয় করতে কিংবা প্রফেশনাল করতে কিছু বেসিক পার্ট বা মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হয়, যেমনঃ স্প্লিট এবং ট্রিম অর্থাৎ ভিডিওটিকে বিভক্ত করা এবং সুবিন্যস্ত করা, ভিডিওকে আকর্ষণীয় করতে তাতে গ্যালারীতে থাকা অন্য যেকোন ছবি কিংবা ভিডিও সংযোজন করা, যেকোন লিখা বা টেক্সট ভিডিওতে সংযোজন করা, ভিডিওতে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক সংযোজন করা , ভিডিওকে আকর্ষণীয় করার জন্য ট্রানজিশন ইফেক্ট সংযোজন করা, কালার ফিল্টার ইত্যাদি৷ এ সকল মৌলিক সুবিধাগুলো নিয়ে প্লে স্টোরে এমন অনেক ভিডিও এডিটিং অ্যাপ আছে যা দিয়ে আপনি মোবাইলের মাধ্যমে খুব সহজেই ভিডিও এডিট করা শিখে নিতে পারেন৷
আমাদের আজকের আলোচনাটি সাজানো হয়েছে সেসকল অ্যাপ নিয়ে-
কাইন মাস্টার- ভিডিও এডিটর, ভিডিও মেকার (Kine Master- Video Editor, Video Maker)
ভিডিও এডিটিং অ্যাপ্গুলোর মধ্যে কাইন মাস্টার অন্যতম জনপ্রিয় একটি অ্যাপ যাতে আপনি একদম ফ্রিতে ভিডিও এডিট করতে পারেন । একটি ভিডিও কে কাট করা, রিভার্স এবং ব্লেন্ড থেকে শুরু করে উচ্চ কোয়ালেটি সম্পন্ন মিউজিক খুব সহজেই এড করা যায় এই অ্যাপের মাধ্যমে৷ কাইন মাস্টারের বিশেষ কিছু ফিচার বা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে- বহুবিধ স্তরের ভিডিও, ইমেজ, ইফেক্টস, ওভারলেইস, স্টিকার, টেক্সট এবং হ্যান্ড রাইটিং সংযোজন, কাইন মাস্টার অ্যাসেট স্টোর থেকে ১০০০এর ও বেশী ইফেক্টস, মিউজিক, স্টিকার কিংবা ওয়ারলেস ডাউনলোড এর সুযোগ, ভিডিও এডিটিং এর তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়া, ভিডিওর রং, উজ্জ্বলতা এবং স্যাচুরেশন নিয়ন্ত্রণ, ভয়েস চেঞ্জসহ অডিও ফিল্টারের ব্যবহার, ব্লার, মোজাইক এবং অন্যান্য ইফেক্ট এর ব্যবহার, এনিমেশন স্টাইল ইউজ এবং ক্রিয়েট ,ভিডিওর ভলিউম এবং স্পিড নিয়ন্ত্রণ, ট্রানজিশন ইফেক্টস( থ্রী-ডি ট্রানজিশনস, ওয়াইপ্স, ফেডস) এর ব্যবহার এবং রিয়েল টাইম ভিডিও ও অডিও এডিটিং৷ এই সফটওয়্যারটির কিছু ফাংশন (যেমন- মিডিয়া সংযোজন) সব ফোনে কাজ নাও করতে পারে৷ সেক্ষেত্রে ফোনের ভার্সন, রোম আপডেটেড হতে হবে৷
কাইন মাস্টার থেকে ইউটিউব, ফেসবুক, গুগল কিংবা ড্রাইভে খুব সহজেই ভিডিও শেয়ার করার সুযোগ থাকলেও এর ওয়াটার মার্ক অনেকেরই আপত্তির কারণ হয়ে ওঠে৷ তবে সমস্যা এড়াতে এই অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর থেকে কিনে নেওয়ার অপশনও রয়েছে৷
ফিল্মোরা গো-ফ্রি ভিডিও এডিটর (FilmoraGo- Free Video Editor)
আমরা ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম কিংবা ফেসবুকে যত জনপ্রিয় মিউজিক কিংবা ভিডিও দেখে থাকি তার বেশিরভাগই এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে করা হয়ে থাকে৷ এটি ইউটিউবারদের কাছে অনেক জনপ্রিয় একটি অ্যাপ যা ভিডিওকে অনেক ইফেক্টিভ করে তোলে৷
এই সফটওয়্যারটির প্রায় সকল ফাংশন ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায়৷ ফিল্মোরা গো এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পাওয়া যায়- বিভিন্ন ভিডিও ইফেক্ট ( যেমন- ফিল্টারস, ওয়ারলেস, এলিমেন্টস, টাইটেল), তাছাড়াও রয়েছে কিছু ব্যাসিক প্রফেশনাল টুলস (যেমন- ট্রিম, মিউজিক, ট্রানজিশন, পিআইপি, ক্রপ, কালার এডজাস্ট, রোটেট), ডাইনামিক সাবটাইটেল যুক্ত করার সুযোগ অর্থাৎ টেক্সট এর কালার, সাইজ বা ফন্ট পরিবর্তন করে যুক্ত করার সুযোগ, অডিও ইকুইলাইজার ও স্পিড নিয়ন্ত্রণ এর ব্যবস্থা অর্থাৎ ভিডিও কে ফাস্ট কিংবা স্লো-মোশন এ কনভার্ট করার সুযোগ। আর এর সাথে ভিডিও শেয়ারিং অপশন তো থাকছেই।
ফোনে ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশন গুলোর মধ্যে এটি একটি অনেক শক্তিশালী ভিডিও এডিটিং অ্যাপ। অ্যান্ড্রয়েড ছাড়াও এটি আইওএস-এও অ্যাভেইলেবল হওয়ায় আইফোন অথবা আইপ্যাড-এও ব্যবহার করা যায়। এর আরেকটি বিশেষ সুবিধা হলো ভিডিও এডিটিং এর সময় প্রকৃত ভিডিও কিংবা অডিও পাশে রেখে কাজ করা যায়, এতে করে উভয়ের মধ্যে তুলনা করে এডিটিং এর মাধ্যমে ভিডিওকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়।
অ্যালাইট মোশন- ভিডিও অ্যান্ড অ্যানিমেশন এডিটর (Alight Motion – Video and Animation Editor)
ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট ব্যবহার করে একদম ডেস্কটপ কোয়ালিটির এনিমেশনস, ভিডিও, ছবি এডিট করার মতন দারুণ একটি সফটওয়্যার এটি৷ কেননা এতে ভিডিও এডিটিং এর মৌলিক সকল টুলস সহ আরো বিশেষ কিছু টুলস রয়েছে যা ভিডিওতে নতুনত্ব প্রদান করে। অ্যালাইট মোশন সফটওয়্যারটির কালার অ্যাডজাস্টমেন্ট, ব্লেন্ডিং মোডস, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ( ব্রাইটনেস/কন্ট্রাস্ট, কালার টোন , কালারাইজ, এক্সপোজার/গামা, হাইলাইটস এবং শ্যাডো,হট কালার) রয়েছেই এবং সাথে রয়েছে আরো বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য।
বিশেষ বৈশিষ্ট্যেগুলোর মধ্যে রয়েছে এর কী ফ্রেম এনিমেশন টুল যা দিয়ে বাস্তবধর্মী এনিমেশন তৈরী করা যায়। এছাড়াও এই সফটওইয়্যারটির সাহায্যে একটি ভিডিওকে স্কয়ার থেকে শুরু করে ওয়াইডস্ক্রিন , যেকোন অনুপাতে প্রেজেন্ট করা যাবে। আরো রয়েছে ভেক্টরগ্রাফিক্স অর্থাৎ নিজের ইমেজিনেশন কে ইলাস্ট্রেট করে ভিডিওতে প্রাণ জুড়ে দেয়ার মতন সুযোগ রয়েছে এই সফটওয়্যারটিতে৷ ভিডিও কে এমপি৪, গিফ এনিমেশন , পিএনজি সিকুয়েন্স , এক্সএমএল প্রোজেক্ট শেয়ারিং ইত্যাদি বিভিন্ন ফরম্যাটে এক্সপোর্ট করা যায় যা এই সফটওয়্যারটির আরেকটি বিশেষ সুবিধা।
পাওয়ার ডিরেক্টর – ভিডিও এডিটর অ্যাপ, বেস্ট ভিডিও মেকার (Power Director- Video editor App, Best Video maker )
কোলাজ এবং দারুণ কিছু ফাংশনের সাহায্যে খুব সহজেই এইচডি ভিডিও বানাতে পারার মতন একটি এপ্লিকেশন এটি । ভয়েস ওভার ও মিউজিক, ভিডিও ইফেক্টস সংযোজন (টেক্সট , অডিও এবং ট্রানজিশন ), ভিডিও স্পীড নিয়ন্ত্রন সহ এর বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে এর ক্রোমা কী ,এর সাহায্যে ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ এবং চেঞ্জ করা যায় যেকোন কালারে । সফটওয়্যারটি ফ্রিতেই ব্যবহার করা যায় তবে এর আপডেটেড আরো ফাংশন পেতে হলে সাবস্ক্রাইব করে নিতে হবে ।
ইউ কাট- ভিডিও এডিটর এন্ড ভিডিও মেকার , নো ওয়াটারমার্ক (You Cut -Video Editor & Video Maker, No Watermark)
ভিডিও এডিটর সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের বেশীরভাগেরই বিরক্তির বিষয় হয় অ্যাপগুলোর ওয়াটার মার্ক । ওয়াটার মার্কের জ্বালাতন এড়াতে চাইলে এই সফটওয়্যারটি অবশ্যই আপনার জন্য৷ কেননা ইউ কাটে রয়েছে মিউজিক, টেক্সট, স্লাইড শো, মার্জ এবং ট্রিম সহ ভিডিও এডিটিং এর জন্য আবশ্যক সকল ফিচার যা ব্যবহার করে ভিডিও এডিটিং একদম সোজা৷
কুইক-ফ্রি ভিডিও এডিটর ফর ফটোস ,ক্লিপ্স , মিউজিক (Quik- Free Video Editor for Photos, Clips, Music )
যেকোন ভিডিও কুইকলি এডিটিং এর জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন কুইক সফটওয়্যারটি৷ কুইক অ্যাপ্লিকেশনটি মোবাইল ভিডিও এডিটিং এর ক্ষেত্রে একেবারেই আলাদা রকম এবং সহজতর একটি মাধ্যম৷ প্রয়োজন শুধু কয়েকটি ক্লিকের। ফটো, ভিডিও কিংবা মিউজিক সিলেক্ট করে ডিউরেশন, ফন্ট, ফিল্টার, ফরম্যাট ইত্যাদি টুলসগুলো সিলেক্ট করলেই ভিডিওটি এডিটেড হয়ে যাবে৷ কুইক অ্যাপে রয়েছে ২৩ টি সুন্দর সুন্দর ভিডিও এডিটিং স্টাইল৷ আর এর সব ফাংশন একদম ফ্রীতেই ব্যবহার করা যায়৷
ভিভাকাট – প্রো ভিডিও এডিটর অ্যাপ(VivaCut – Pro Video Editor App)
অন্যান্য সফটওয়্যারগুলোর মত এই সফটওয়্যারটিরও ভিডিও এডিটিং করার জন্য সকল ফিচার রয়েছে।ভিডিও ইফেক্টস , ভিডিও ব্লেন্ডিং , মাল্টিলেয়ার এডিটিং সহ এর বিশেষ ফিচারের মধ্যে রয়েছে – হলিউড ক্রোমা কী , যা দিয়ে হলিউড স্টাইলের ব্যাকগ্রাউন্ড সেট করা যায় । রয়েছে অলরাউন্ডার এডিটিং টুলস এবং প্রফেশনাল টেক্সট যা ভিডিওকে প্রফেশনাল বানাতে সাহায্য করে।
উল্লেখিত এই সফটওয়্যারগুলো নির্বাচন কিরা হয়েছে সফটওয়্যারের সহজপ্রাপ্যতা, জনপ্রিয়তা এবং ব্যবহার উপযোগিতার উপর ভিত্তি করে। এছাড়াও আরো অনেক ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার মার্কেটে রয়েছে । পছন্দমত সফটওয়্যারটি বেছে নিয়ে এখন খুব সহজে মোবাইলেই ভিডিও ক্রিয়েট, এডিট এবং শেয়ার করুন৷