কার্টুন দেখা যায়েজ কি না

আসসালামু আলাইকুম
কর্টুন ছবি দিয়ে বানানো ইসলামিক মুভি আমরা সবাই কম বেশি দেখে থাকি। এই গুলোতে বিশেষ করে শিশুদের জন্য তাৎপর্য মূলক শিক্ষামূলক কাহিনি থাকে যা ভালো চরিত্র,মাতা পিতার প্রতি অনুগত হওয়া,সততা,নিয়মিত সালাত আাদায় করা ইত্যাদি বিষয়ের দিকে শিশুদেরকে উৎসাহিত করে। এই ইসলামিক কার্টুন গুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, টিভির বিকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপন করা যা কিনা ব্যাপকতা লাভ করেছে। যাইহোক,বর্তমানে আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি সেটা হচ্ছে–

এই কার্টুন গুলোতে মানুষের ও প্রাণির ছবি থাকে। প্রাণির ছবি আকা এই কার্টুন গুলো দেখা কি আমাদের জন্য যায়েজ হবে?এটাই হচ্ছে আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় জার বিস্তারিত জানা আমাদের প্রতিটা মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কার্টুনের মধ্যে যদি হারাম বা অশ্লীল কোন কিছু না থাকে,তাহলে এতে গুনাহ হবেনা। সুস্পষ্ট ভাবে হারাম এমন বিষয় যদি না থাকে,তাহলে কার্টুন দেখা জায়েজ। যে কাজকে আমরা সাধারণত অশ্লীল মনে করে থাকি বা ইসলাম যে কাজগুলোকে অশ্লীল বলে ঘোষণা করেছে,সেগুলো মূলত হারাম কাজ। তবে কার্টুন ছবি কখনোই হারামের বাইরে হতে পারেনা। পুরো পুরি পরিষ্কার হবার জন্য এই হাদীস ভালো করে জানুন।

‘সাঈদ ইবনে আবুল হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) নিকট উপস্থিত করছিলাম। এমন সময় তার কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল হে আবু আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে,আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি তৈরি করি। ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বলেন, এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি কোন প্রাণির ছবি অংকন করে আল্লাহ তায়ালা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ছবির মধ্যে প্রাণ দিতে পারে। আর সে ছবির মাঝে সে কখনোই প্রাণ দিতে পারবেনা” (এ কথা শুনে) লোকটি ভিষণ ভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য! তুমি যদি এ কাজ না- ই ছাড়তে পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসের প্রাণ নেই, তা অংকন করতে পার।[ সহীহ আল বুখারী, চতুর্থ খন্ড হাদীস নং ২০৮৪ ( ইসলামি ফাউন্ডেশন) ]

বিষয়টি পরিষ্কার হতে না পারলে জেনে নিন আরো একটি হাদীস। মা আয়েসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ( তাবুক যুদ্ধের) সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি আমার ঘরে পাতলা কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়ে ছিলাম। তাতে ছিলো প্রণির অনেকগুলো ছবি। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিরে ফেললেন এবং বললেন ঃ ” কিয়ামতের সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্টির ( প্রাণির) অনূরূপ তৈরি করবে। এরপর আয়েশা (রাঃ) বলেন এরপর আমরা তা দিয়ে একটি বা দুটি বসার আসন তৈরি করি। [ সহিহ আল বুখারী, নবম খন্ড হাদীস নং ৫৫৩০ ( ইসলামি ফাউন্ডেশন) ]

অল্প কথায় এ দুটি হাদীস থেকে পরিষ্কার যে ছবি আঁকা ইসলামে যায়েজ নয়, এমনটা করলে গুনাহগার হতে হবে এবং মৃত্যুর পর কঠিন বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এবার আসুন মূল বিষয়ে, আমরা জানলাম কোন প্রাণির ছবি বানানো যায়েজ নয়, তার মানে সেই ছবি দিয়ে কোন মুভি বানানো কিংবা গল্প বানানোও জায়েজ নয়। হোক না সেটা ইসলামিক কিংবা শিক্ষণীয় কিছু। না জায়েজ উপকরণ দিয়ে যদি ইসলাম প্রচার কিংবা শিক্ষা দেওয়া জায়েজ হতো তবে তো কুরবানির জন্য গরু চুরি করারও অনুমতি থাকতো। এবার আসুন পরের কথায়; যে বিষয় টি তৈরি করা জায়েজ নয়, সেটি দেখা কিংবা উপভোগ করা কি জায়েজ হতে পারে? ইসলামে নাজায়েজ কিছুকে সমর্থন করার কোন অনুমতি নেই। অনুমতি নেই নাজায়েজ কে উপভোগ করার। আপনি একজন প্রকৃত মুসলিম হলে অবশ্যই নাজায়েজ কে মনে প্রাণে ঘৃণা করবেন। না জায়েজকে উপভোগ করার প্রশ্নই উঠেনা। তার মানে কার্টুন ছবি ক্রয় করা, বিক্রি করা বা এগুলোকে কোন কাজে ব্যাবহার করা কিংবা কার্টুন মুভি দেখাও জায়েজ নয়। কারণ এতে হারাম ছবি বিদ্যমান। অনেকেই, বলেন কার্টুন ইসলামি শিক্ষণীয় হলে দেখা যাবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাতে একমত নই, কেননা যেকোন কারনই হোক না কেন প্রাণির ছবি আঁকাই তো হারাম। সে ছবি দিয়ে ইসলামিক গল্প কিংবা মুভি তৈরি তাই হারাম ও দেখাও হারাম। সন্তানদেরকে লালন পালন করা, তাদের শিক্ষা দেওয়া, আাদব কায়দা শেখানো, সালাত আদায় করতে এবং সালাতের বিষয়ে উৎসাহিত করা – এই রকম বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে ইসলাম সম্মত উপায়েই। আল্লাহ আমাদের সফলতা দান করুন আমিন।

Add Comment