ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জবের মধ্যে পার্থক্য জানুন

ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব – শুনতে দুইটি বিষয় একই মনে হলেও আসলে এই দুইটির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান। সঠিক তথ্য সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার ফলে অনেকে দ্বিধায় পড়ে যান তাদের জন্য উপযোগী কোন পথ তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। এই পোস্টে পড়ার পর ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব সম্পর্কে আপনার সকল বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে।

দিনদিন রিমোট জব এর প্রতি ঝুঁকছেন অধিকাংশ মানুষ। প্রযুক্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্র, যেমনঃ ডেভলপার, আইটি এক্সপার্ট, বিশেষ করে আইটি রিক্রুটমেন্ট এজেন্সির মধ্যে রিমোট ওয়ার্ক বেশ জনপ্রিয় একটি কাজের ধরন। ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট ওয়ার্ক, উভয়ই ঘর থেকে কাজের বিভিন্ন রুপ হলেও এদের মধ্যকার পার্থক্য জানা জরুরি।

রিমোট জব এর মানে মানে হলো আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের ফুল-টাইম কর্মচারী, অন্যদিকে ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে প্রজেক্ট শেষ হলে কাজের সমাপ্তি ঘটে। উভয় ক্ষেত্রে কোনো অফিসে হাজিরা দিতে হয়না। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় দুইটি বিষয়কে একই মনে হলেও কিছু ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জবের মধ্যে পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত।

ফ্রিল্যান্সিং কি

ফ্রিল্যান্সিং হলো মূলত শিডিউল ফ্লেক্সিবল পার্ট-টাইম জব। একজন ফ্রিল্যান্সার সেল্ফ-এমপ্লয়েড ইনডিভিজুয়াল যিনি নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতার সমন্বয়ে কোনো প্রজেক্টে কাজ করে থাকেন। গ্রাফিক্স ডিজাইনার, মার্কেটিং এক্সপার্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ইত্যাদি কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং জব। 👉 ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

রিমোট জব কি

রিমোট জব হলো সাধারণত ফুল-টাইম জব, কিন্তু অফিসের পরিবর্তে ঘর থেকে করা যায়। অর্থাৎ “ওয়ার্ক ফ্রম হোম” ধারণার মূলেই রয়েছে রিমোট জব। বিশ্বের যেকোনো স্থানে বসে রিমোট জব করা যায়। তবে রিমোট জব এর ক্ষেত্রে থাকতে পারে নির্দিষ্ট অফিস টাইম, যা মেনে চলা বাধ্যতামূলক। মূলত কোম্পানি কালচার এর উন্নতির লক্ষ্যে বিভিন্ন ডেমোগ্রাফিক এর মানুষকে এক ছাদের নিচে আনা সম্ভব হয় রিমোট জব এর মাধ্যমে।

ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জবের মধ্যে পার্থক্য

ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব, উভয় ক্ষেত্রে অফিসে না গিয়ে কাজ করা সম্ভব। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রে আপনি কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকছেনা। নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট কানেকশন ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব করতে পারবেন যেকেউ।

কাজের ক্ষেত্রে একজন ব্যাক্তি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা পাচ্ছেন ফ্রিল্যান্সিং বা রিমোট জব, উভয় ক্ষেত্রে। তবে রিমোট জব এর ক্ষেত্রে সাধারণ চাকরির মত ধরাবাধা কিছু নিয়ম থাকে, কন্ট্রাক্ট থাকে ও নির্দিষ্ট ওয়ার্কিং আওয়ার থাকে। অর্থাৎ স্বশরীরে অফিসে যাওয়া ছাড়া চিরাচরিত চাকরির সকল বিষয় রিমোট জব এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

চলুন জেনে নেওয়া যাক ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জবের মধ্যে বিদ্যমান সকল মিল ও অমিল সম্পর্কে।

চুক্তি এবং বাধ্যবাধকতা

রিমোট জব এর ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। হোম-বেসড জব হলেও স্কাইপ, স্ল্যাক, টিমস, ইত্যাদি যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে নিয়মিত ভার্চুয়াল প্রেজেন্স বজায় রাখতে হয়। মাঝেমধ্যে কর্মচারী মনিটরিং অ্যাপ, যেমনঃ টাইম ডক্টর অ্যাপ ব্যবহৃত হয় রিমোট ওয়ার্কার এর এটেন্ডেন্স রেকর্ড করতে।

যদিওবা রিমোটলি কাজ করা ডেভলপারদের ফিজিক্যাল প্রেজেন্স প্রদান করার দরকার হয়না, কিন্তু ভার্চুয়ালি হলেও ঠিকই উপস্থিতি প্রদান করতে হয়। সময়ের বিচারে একজন রিমোট ওয়ার্কার এর কাজের ভ্যালু বিবেচনা করা হয় ও একই প্রজেক্টে কাজ করা অন্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয়। ঠিক অন্য যেকোনো কর্মচারীর মত কাজ ও দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তা ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হয় একজন রিমোট ওয়ার্কারের।

অন্যদিকে একজন ফ্রিল্যান্সার এর সকল কাজের দায়িত্ব থাকে তার নিজের। আবার নিজের ইচ্ছেমত কাজ বাছাই করার পাশাপাশি চাইলে কাজের অফার ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ ও রয়েছে।

একজন ফ্রিল্যান্সার তার কাজের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ওয়ার্কিং আওয়ার বা শিডিউল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। অর্থাৎ কাজ গ্রহণ করার পর ডেডলাইনের মধ্যে কাজ করে দেওয়া হলো একজন ফ্রিল্যান্সার এর কাজ। ফ্রিল্যান্সার কোন সময়ে তার কাজ করছে এই নিয়ে ক্লায়েন্টের কোনো মাথাব্যাথা থাকেনা। একজন ক্লায়েন্টের কাজ সম্পন্ন করে অন্য প্রজেক্টে কাজ করতে মুক্ত একজন ফ্রিল্যান্সার।

👉 ইউটিউব থেকে আয় করার সহজ কিছু উপায়

নির্বাচন প্রক্রিয়া

আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইতিমধ্যে আপওয়ার্ক বা ফাইভার এর মত প্ল্যাটফর্মে কাজের খোঁজ করে থাকেন, তবে জেনে থাকবেন কাজ পাওয়া কি কঠিন। অধিকাংশ সময় কম রেটে কাজ করতে রাজি হওয়া ফ্রিল্যান্সাররা কাজ পেয়ে থাকে।

অন্যদিকে একটি প্রতিষ্ঠান দুইটি বিষয় বিবেচনা করে রিমোট জব এর জন্য কোনো ব্যাক্তিকে নির্বাচন করেঃ

  • কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা আছে কিনা ও
  • রিমোটলি কোনো টিম এর সাথে যোগাযোগ রেখে কাজ করতে পারে কিনা

সাধারণ যেকোনো চাকরির মত রিমোট জব এর ক্ষেত্রেও কোনো পদ এর জন্য এপ্লাই করা, ইন্টারভিউ দেওয়া ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তবেই রিমোট জব পাওয়া যায়।

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের কাজ নিজে খুঁজেন ও নিজে সম্পন্ন করেন। অন্যদিকে রিমোট জব এর ক্ষেত্রে কাজ খোঁজার ক্ষেত্রে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাজ পাওয়ার পর টিম এর সাথে একসাথে কাজ করতে হয়

👉 আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং

অনিশ্চয়তা

একজন ফ্রিল্যান্সার এর ক্যারিয়ার অনেকটা অনিশ্চয়তায় ভরা। কাজের খোঁজ করার ক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার সম্পূর্ণ আত্মনির্ভরশীল। আবার সবসময় কাজ না ও পেতে পারেন, আর কাজের সাথে সাথে আয়ের পরিমাণের ক্ষেত্রেও রয়েছে অনিশ্চয়তার হাতছানি। এসব বিষয় বিবেচনা করলে রিমোট জব বেটার অপশন বলে মনে হতে পারে।

তবে অনিশ্চিয়তার অবিচার থেকে বাদ পড়েনি রিমোট জব ও। যেহেতু যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট এর উপর নির্ভর করতে হয় রিমোট জব এর ক্ষেত্রে, তাই ঠিকমত নিজের দায়িত্ব পালনের অস্তিত্ব নির্ভর করে নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার উপর।

👉 ঘরে বসে টাকা ইনকাম করার কৌশল

নিঃসঙ্গতা

ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোট জব, উভয় ক্ষেত্রে ডাউনসাইড হলো নিঃসঙ্গতা। যেহেতু উভয় ক্ষেত্রে একাই কাজ করতে হয়, তাই হতাশা বা অসাড়তা অনুভব হতে পারে। তবে এই সমস্যা দূর করা তেমন একটা কঠিন না। কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি দৈনিক ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও যোগাযোগ বজায় রাখলে নিঃসঙ্গতা সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে হয়না।

ফ্রিল্যান্সিং নাকি রিমোট জব – আপনার মতে কোনটি অধিক সুবিধাজনক? আমাদের জানান কমেন্ট সেকশনে।

*** ফেসবুক পেজ থেকে আয় করার সেরা ৭টি উপায়

Add Comment