আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং কি, কেন, কিভাবে?
লেখাটির শুরুতেই আপনাকে সাবধান করে দিচ্ছি- আপনি যদি সহজ রাস্তায় অর্থ উপার্জনের চিন্তা করে থাকেন, দয়া করে আমার এই টিউন থেকে দূরে থাকুন। কারণ আমি জানি, এখানে সহজ রাস্তায় ইনকাম করা সম্ভব নয়। শুধুমাত্র পরিশ্রমী এবং সৎ যারা তারাই আমার এই পদ্ধতিতে ইনকাম করতে পারবেন, ইনশাল্লাহ। আমি নিজে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ইনকাম করি। তা-ই আপনাদের শেখাবো।
শুরুতেই জেনে নিন কত ইনকাম করবেন আপনি?
লক্ষ্য: আমাদের এই চেইন টিউটোরিয়ালের লক্ষ হচ্ছে- তিন থেকে চার মাস সময় ব্যয় করে ৩০০-১০০০ ডলার প্রতি মাসে ইনকাম করা।
আমার এই টিউটোরিয়ালটি মোটামুটি ১২ টি পর্বে সাজানো হয়েছে। এই পর্বগুলো প্রকাশ করা হবে ৩ মাসে। তিন মাস আপনি হাতে-কলমে-কম্পিউটারে কাজ শিখবেন। ইচ্ছে করলে শেখার সাথে সাথে কাজও শুরু করতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ- কাজ শেখার পর শুরু করুন। তাহলে তিন মাস কাজ শেখার পর পরের তিন মাস আপনি কাজগুলো ইমপ্লিমেন্ট করবেন।
অর্থাৎ মোট ৬ মাস ক্রান্তিকাল। এই ছয় মাস যদি আপনি পরিশ্রম করেন তাহলে সপ্তম মাস থেকে আপনার মিনিমাম ইনকাম হবে ১০০০ ডলার প্রতি মাসে। আর যদি প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ কাজ শেখার সাথে সাথেই কাজ করা শুরু করেন তাহলে প্রথম তিন মাস পর, অর্থাৎ চতুর্থ মাস থেকে আপনার ইনকাম মোটামুটি ৩০০ ডলার দিয়ে শুরু হবে ইনশাল্লাহ।
সতর্কতা! না বন্ধুগণ। এখানে শর্টকাট বা সহজ উপায়ে ইনকাম করার কোনো ওয়ে নেই। মিনিমাম ৩ মাস আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এছাড়া এখানে দয়া করে সময় নষ্ট করবেন না। একেবারেই করবেন না!
একটি সহজ অংক
বাংলাদেশের প্রচলিত পড়ালেখার সিস্টেমে মাস্টার্স পাস করতে কত বছর লাগে? উত্তর হচ্ছে ১৭ বছর (প্রাইমারি ৫ বছর + হাইস্কুল ৫ বছর + কলেজ ২ বছর + অনার্স ৪ বছর + মাস্টার্স ১ বছর = ১৭ বছর)। তাই না? এই সতেরো বছর পড়ালেখা করে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা ১৫ হাজার টাকা মাসে চাকরি পেলেই খুশিতে আটখানা হন।
তো ১৭ বছর কঠোর সাধনা করে যদি আপনি আশা করেন ১৫ হাজার টাকা, তাহলে কেমন করে অনলাইনে কোনো সময় না দিয়ে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করার চিন্তা করেন? মাথা খাটান, বন্ধুগণ! সুতরাং আমি বলবো- সহজ রাস্তা মানেই ফাঁকির রাস্তা। অনেক সময় নষ্ট করেছেন বিভিন্ন দিকে। সব বাদ দিয়ে আসুন সত্যিকারের প্রফেশনাল কিছু শিখি। নিজে উপকৃত হই, দেশকেও সমৃদ্ধ করি।
এই টিউটোরিয়াল কাদের জন্য?
আপনার জন্যই! হ্যাঁ, আপনার জন্যই যদি আপনি হয়ে থাকেন সৎ, সাহসী, পরিশ্রমী এবং চ্যালেঞ্জ গ্রহণে বদ্ধপরিকর। তাহলে আপনার জন্যই এই টিউটোরিয়াল।
কি কি যোগ্যতা লাগবে?
বাড়তি কোনো যোগ্যতা লাগবে না। আপনি যদি অনলাইন জগতের সাথে পরিচিত হয়ে থাকেন, তাহলে মোটামুটি সবকিছুই আপনি জানেন। আমি শুধু আপনাকে শিখিয়ে দেবো কোনটা কী কাজে লাগাবেন? খেয়াল করুন- ছুরি যদি ছিনতাইকারীর হাতে থাকে সেটা হয় প্রাণনাশক, আর ডাক্তারের হাতে থাকলে সেটা প্রাণদাতা। তাই নয় কি? আমার এই কাজে গুগল, ফেসবুক এবং ট্যুইটার বড় ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও ইউটিউব, লিঙ্কডইন, স্টাম্বলআপন, পিন্টারেস্ট জাতীয় কিছু ওয়েবসাইট লাগবে। কিন্তু সেগুলো তেমন কিছু নয়। আমার এই টিউটোরিয়াল থেকেই আপনি বিস্তারিত শিখে নিতে পারবেন। সুতরাং উপরের কোনো ওয়েবসাইট সম্পর্কে আপনার জানা না থাকলেও অসুবিধা নাই।
এই টিউটোরিয়াল কাদের জন্য নয়?
আপনার জন্য নয় যদি আপনি-
– সহজ রাস্তায় ইনকাম করতে চান
– স্বল্প সময়ে ইনকাম করতে চান
– পরিশ্রম না করেই ইনকাম করতে চান
– কাজ করার মানসিকতা না থাকে
– শর্টকাট ওয়েতে বড়লোক হতে চান
– যদি আপনি অলস হন
– যদি আপনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক না হন….
এবার আপনি-ই সিদ্ধান্ত নিন এই টিউটোরিয়াল আপনার জন্য, নাকি আপনার জন্য নয়?
কি কি শিখবো আমরা?
এই পর্বটি শুধুমাত্র প্ল্যান করার জন্যই। সুতরাং কি কি শিখবো এবং কীভাবে শিখবো তা জেনে নিই চলুন। প্রথমেই কি কি শিখবো তার একটা সামারি বা সারাংশ পয়েন্ট আকারে দিলাম:
পর্ব – ০১: আমাজন নিস সাইট প্ল্যানিং
পর্ব – ০২: কীওয়ার্ড রিসার্চ: আমাজন এফিলিয়েট মার্কেটিং-এর সবচেয়ে গুরুত্ব অংশ
পর্ব – ০৩: নিস সাইট কম্পিটিশন এনালাইসিস স্ট্রাটেজি
পর্ব – ০৪: নিস সাইটের জন্য পারফেক্ট ডোমেইন এবং বেস্ট হোস্টিং বাছাই
পর্ব – ০৫: পেইড ডোমেইন ও হোস্টিং-এর বিকল্প [যাদের ডোমেইন হোস্টিং কেনার সামর্থ নাই]
পর্ব – ০৬: সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে নিস সাইট ডিজাইন [কোডিং জ্ঞান ছাড়াই]
পর্ব – ০৭: নিস সাইটের জন্য প্রয়োজনীয় কনটেন্ট লেখা/সংগ্রহ এবং সাজানো
পর্ব – ০৮: মাত্র একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে নিস সাইটের অন-পেজ এসইও করুন পারফেক্টভাবে
পর্ব – ০৯: কীভাবে আমাজন এসোসিয়েটস একাউন্ট-এর জন্য এপ্লাই করবেন?
পর্ব – ১০: অফ-পেজ এসইও করুন সুনির্দিষ্টভাবে মাত্র তিন ধাপে
পর্ব – ১১: নিস সাইটে আমাজন এফিলিয়েট লিংক এড করুন আর শুরু করুন আর্নিং
পর্ব – ১২: নিস সাইট থেকে প্যাসিভ ইনকাম
আমাজন এফিলিয়েট থেকে সর্বোচ্চ কত টাকা ইনকাম করা সম্ভব?
প্যাট ফ্লিন নামের একজন এফিলিয়েট মার্কেটিং করে প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় এক কোটি টাকা।
অনলাইন ঘাটলে এরকম আরও অনেক অনেক পাবেন। মজার ব্যাপার হলো: টিটিতে তো অনেক আর্নিং করার পদ্ধতিই দেখেছেন। কিন্তু জানেন কি সবচেয়ে বেশি ইনকাম করে কারা? কারা অনলাইন জগতের রাজা? হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন- এফিলিয়েট মার্কেটাররাই হচ্ছেন অনলাইন জগতের রাজা। তারাই সবচেয়ে বেশি ইনকাম করেন। ইভেন আমাদের দেশেও তাই।
হ্যাঁ, হয়তো এতোক্ষণ ভাবছেন- বিদেশীরা তো সবসময়ই কোটি কোটি টাকা ইনকাম করে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ, আমরা কি পারবো? আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের অনেক এফিলিয়েট মার্কেটারকে চিনি যাদের ইনকাম প্রতি মাসে ২০ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা। কী বিশ্বাস হয় না? ভাবছেন কেন তারা আর্নিং রিপোর্ট প্রকাশ করে না? কী মনে হয় আপনার? বাংলাদেশের এই পরিবেশে আপনি যখন মাত্র ৫ লক্ষ টাকা প্রতি মাসে ইনকাম করবেন নিজের ঘরে বসে থেকেই; তা কি প্রকাশ করবেন? আমার মনে হয় না করবেন। সুতরাং করে না।
তবে সবাই যে করে না, তা নয়। যারা ট্রেনিং করান বা স্টার হতে চান, তাদের কেউ কেউ ইদানিং তাদের আর্নিং রিপোর্টের স্ক্রিনশট ফেসবুকে দেখান। তবে আমার ইচ্ছে নেই এরকম আর্নিং রিপোর্ট প্রকাশ করার। কারণ পেইড টিউটোরিয়াল বা পেইড ট্রেনিং আমি কখনোই করাবো না। গ্যারান্টেড! আমি কখনও শিখিয়ে কারও কাছ থেকে টাকা নেবো না। আপনাদের পছন্দ হলে ফ্রি টিউটোরিয়াল থেকে শিখুন, নয়তো না।
নটে গাছটি মোড়ালো, আমার গল্প ফুরালো। 😀
আগামী পর্ব থেকে মূল টিউটোরিয়ালে আমরা হাত দেবো। একটাই অনুরোধ: আমার কোথাও কোনো ভুল হলে, বা আপনাদের বুঝতে অসুবিধা হলে টিউমেন্টে জিজ্ঞেস করবেন। আমি আপনাদের প্রতিটি টিউমেন্ট গুরুত্ব দিয়ে পড়বো এবং প্রাসঙ্গিক উত্তর দেবো। একটা বিষয় মনে রাখবেন- আমি কিন্তু শিক্ষক নই, সুতরাং আমার বুঝানোতে ভুল থাকতেই পারে। তবে আপনারা যদি প্রশ্ন করেন তাহলে আমার জন্যও সুবিধা, আপনার জন্যও। দয়া করে কেউ ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবেন না। শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করুন।
সাথে থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ।